পূর্ব ঘোষণা মতো রবিবার পশ্চিমবঙ্গের জন্য ইস্তেহার প্রকাশ করল বিজেপি। যাকে বিজেপি বলছে ‘সোনার বাংলা সঙ্কল্প পত্র’। এর আগে তৃণমূল কংগ্রেস, বামেরা তাদের ইস্তেহার প্রকাশ করেছে। আজকে বিজেপি’র ইস্তেহার যেনো সকলকে ম্লান করে দিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তেহার প্রকাশ করে রাজ্যের মানুষদের জন্য একগুচ্ছ নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন, যার মাধ্যে দিয়ে প্রতিটি পরিবার সরাসরি আর্থিকভাবে উপকৃত হবে। কিন্তু এদিন বিজেপি’র প্রকাশিত ইস্তাহারের কাছে সেগুলোকে একদম ফিকে বলে মনে হচ্ছে। বিজেপি’র ইস্তেহারে রাজ্যের মহিলাদের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের কথা শুনিয়েছে গেরুয়া শিবির।

ইস্তেহার প্রকাশ করার আগে অমিত শাহ বলেন, ‘‘অনেক বছর ধরেই ইস্তেহার কেবলই ফাঁপা কাগজ। কিন্তু বিজেপি সরকার গড়ার পরেই এই ইস্তেহারের বাস্তবায়ন ঘটেছে। এই কারণেই আমরা এর নাম দিয়েছি সঙ্কল্প পত্র। কারণ, আমাদের সঙ্কল্প, বাংলাকে সোনার বাংলা গড়ব। এটা কেবল ঘোষণা নয়, সঙ্কল্প। এটা প্রকাশ করার আগে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে মানুষের মতামত গ্রহণ করা হয়েছে নানা পদ্ধতির মাধ্যমে।’’

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বিজেপি’র ইস্তেহারে কী কী আছে-

  • বালিকা আলো: রাজ্যের সব মেয়েদের আর্থিক সুবিধা দেওয়া হবে। ১৮ বছর হলেই তাদের ২ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।
  • সরকারি চাকরিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ করা হবে।
  • কেজি থেকে এমএ পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা বিনামূল্যে।
  • সমস্ত গণপরিবহণ মহিলাদের জন্য ফ্রি।
  • সমস্ত মহিলাকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান, যার মধ্যে রয়েছে ওপিডি ও উন্নত চিকিৎসা।
  • মহিলা পরিচালিত স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির জন্য ৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে।
  • প্রসূতিদের অনুদান ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার টাকা করা হবে।
  • বিধবা ভাতা ১ হাজার থেকে বেড়ে ৩ হাজার টাকা হবে।
  • মহিলাদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে রাজ্য পুলিশে ৯টি মহিলা পুলিশ ব্যাটেলিয়ন গঠন করা হবে এবং রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীতে ৩টি মহিলা ব্যাটেলিয়ন গড়া হবে।
  • পার্শ্ব শিক্ষকদের বেতন প্রাথমিকে ১৫,০০০ এবং মাধ্যমিকে ২০,০০০ টাকা করা হবে।
  • স্কুলগুলিতে বাংলা পড়তেই হবে। সে যে মিডিয়ামেরই স্কুল হোক না কেন।
  • রাজ্যের সর্বত্র অন্নপূর্ণা ক্যান্টিনে ৫টাকায় খাবার মিলবে দিনে তিনবার।
  • রেশনে ১ টাকা কেজি গম, ৩০ টাকা কেজি ডাল, ৩ টাকা কেজি নুন এবং ৫ টাকা কেজি চিনি বিক্রি হবে। এখানে কোনও কাটমানি থাকবে না।
  • প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি বাস্তবায়ন হওয়ার ফলে ৭৫ লক্ষ কৃষকদের বার্ষিক সহায়তা বৃদ্ধি হয়ে ১০,০০০ টাকা হবে।
  • গত তিন বছর বাস্তবায়িত না হওয়া প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধির আওতায় ৭৫ লক্ষ কৃষককে এককালীন ১৮,০০০ টাকা বকেয়া দেওয়া হবে।
  • ৪ লক্ষ মৎস্যজীবীকে প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান প্রকল্পের অনুরূপ বছরে ৬ হাজার টাকা করে দেবে সরকার।
  • উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল ও সুন্দরবন এলাকায় তিনটে এইমস হাসপাতাল হবে।
  • প্রতিটি পরিবারে অন্তত এক জন চাকরি পাবেন।
  • ২০ লক্ষ যুবকের দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রতিটি ব্লকে নেতাজি ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা হবে।
  • বিদ্যালয় পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য ২০,০০০ কোটি টাকার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তহবিল স্থাপন করা হবে।
  • প্রতিটি ব্লকে কমিউনিটি স্পোর্টস সেন্টার, প্রতিটি মহকুমায় মাল্টি স্পোর্টস স্টেডিয়াম এবং প্রতিটি জেলায় ক্রীড়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে।
  • সরকারি কর্মচারিদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন গঠন করা হবে। অ্যান্টি-কোরাপশন হেল্পলাইন হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি অভিযোগ জানানো হবে।
  • প্রতিটি ঘরে শৌচাগার থাকবে।
  • সত্যজিৎ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড উপস্থাপনা করা হবে।
  • অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়াদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
  • চারটি মেগা ফুড পার্ক, দশটি ছোট ফুড পার্ক, একটি চা পার্ক, দুটি সি ফুড প্রসেসিং পার্ক স্থাপন করা হবে।
  • ২টি চামড়া শিল্প উদ্যান, ১টি লৌহ ইস্পাত শিল্প উদ্যান, ১টি জুয়েলারি শিল্প উদ্যান, ১টি ফার্মা পার্ক, ১টি ইলেকট্রনিক্স এবং সেমিকন্ডাক্টর শিল্প উদ্যান এবং ১টি অটো শিল্প পার্ক স্থাপন করা হবে।
  • ফসলের দাম নিশ্চিত করতে ৫ হাজার কোটি টাকার ফান্ড তৈরি হবে।
  • সকল ভূমিহীন কৃষক এবং ভাগচাষিকে প্রতি বছর ৪,০০০ টাকা করে দেওয়া হবে।
  • ২০ হাজার কোটি টাকার কৃষক সুরক্ষা কৃষি পরিকাঠামো তহবিল গড়া হবে।
  • কৃষক ও মৎস্যজীবীদের ৩ লক্ষ টাকার বিমা মিলবে।
  • কোল্ড স্টোরেজ, মিল্ক প্রসেসিং ইউনিট তৈরি হবে রাজ্যে। বাংলার হোয়াইট রেভলিউশনে ১,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ।
  • মুর্শিদাবাদে মলমল রিসার্চ সেন্টার তৈরি হবে।
  • শিক্ষিত যুবকদের কথা ভেবে প্রতিটি ব্লকে কাজ হবে।
  • আরও আইআইটি এবং আইআইএম তৈরি হবে।
  • সাঁওতালি, রাজবংশী, নেপালি ভাষায় জোর দেওয়া হবে শিক্ষাক্ষেত্রে।
  • কয়লা মাফিয়া, বালি মাফিয়াদের জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে।
  • রাজনৈতিক হিংসায় মৃতদের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে এবং অপরাধিরা শাস্তি পাবে।
  • এমএসএমই-গুলিকে ১০ লক্ষ টাকা করে ঋণ দেওয়া হবে।
  • ১০,০০০ কোটি টাকার কাদম্বিনী গাঙ্গুলী স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর তহবিল গড়া হবে।
  • আশা কর্মীদের বর্তমান স্থায়ী মাসিক সাম্মানিক ৪,৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬,০০০ টাকা করা হবে।
  • কলকাতাকে ‘ফিউচার সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
  • ৬৭৫ কিলোমিটার রাস্তা, কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত তৈরি হবে।
  • বাগডোগরা এয়ারপোর্ট আান্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছনোর জন্য ফান্ড তৈরি করা হবে।
  • মালদা, বালুরঘাট ও কোচবিহার বিমানবন্দরগুলিকে সচল করা হবে।
  • গঙ্গাসাগর মেলাকে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছনোর জন্য ফান্ড তৈরি করা হবে।
  • ৬০ বছরের বয়স্ক কীর্তন গায়কদের মাসে ৩,০০০ টাকা অনুদান দেওয়া হবে।
  • ১০টা মাল্টিস্টোরিড পার্কিং তৈরি হবে।
  • আদিগঙ্গা পরিষ্কার করে পুনরুজ্জীবিত করা হবে।
  • কলকাতার সঙ্গে শহরতলির দ্রুত যোগাযোগ বাড়াতে কলকাতা মেট্রাোর সম্প্রসারণ শ্রীরামপুর, ধুলাগড় এবং কল্যাণী পর্যন্ত করা হবে।
  • এসি ও নিচু মেঝেযুক্ত বাসের সংখ্যা বেড়ে ৩,০০০ হবে।

ইস্তেহার প্রকাশ অনষ্ঠানে অমিত শাহ বলেন, আপনারা ৩৪ বছর কমিউনিস্টদের দিয়েছেন, ১০ বছর দিয়েছেন তৃণমূলকে, কংগ্রেসকে স্বাধীনতার পর থেকেই দিয়েছেন। ৫ বছর সময় দিন নরেন্দ্র মোদী সরকারকে, আমরা নতুন বাংলা গড়ব।