বুধবারের একটি ঘটনা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। এদিন হাসপাতালে বিজেপি নেতা তথা বিধায়ক মুকুল রায়ের স্ত্রীকে দেখতে আসেন যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনায় সংক্রমণের পর বেশ কিছুদিন ধরেই ইএমবাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মুকুল রায়ের স্ত্রী কৃষ্ণা রায়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি এখন করোনা মুক্ত হলেও তাঁর  শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট সঙ্কটজনক। তাঁকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

এদিন দুপুরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমায় ইয়াস-বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে যান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে ফিরে তিনি সরাসরি চলে যান বাইপাস সংলগ্ন হাসপাতালে মুকুল রায়ের স্ত্রীকে দেখতে। যদিও সেই সময় মুকুল হাসপাতালে ছিলেন না। দুপুরেই তিনি হাসপাতাল থেকে কাঁচড়াপাড়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দেন। তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। মুকুল নিজেও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এতদিন তিনি তাঁর সল্টলেকের বাড়িতে নিভৃতবাসে ছিলেন। তবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যখন হাসপাতালে আসেন তখন বীজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক শুভ্রাংশু রায় সেখানে ছিলেন। শুভ্রাংশুর কাছ থেকেই তাঁর মায়ের চিকিৎসা সংক্রান্ত খোঁজ খবর নেন অভিষেক।

এই খবর সংবাদমাধ্যমে আসার পর বিজেপি’র রাজ্যসভাপতি দিলীপ ঘোষও মকুল রায়ের অসুস্থ স্ত্রী’র খোঁজ নিতে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হন।

এদিন অভিষেকের হাসপাতালে আসার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছে তাহলে কি সপুত্র মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরছেন? মকুল রায়ের পরিবার এই মুহূর্তে যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তখনও কিন্তু তাঁদের নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চলছে। এই ধরনের জল্পনার পিছনে অনেকগুলি কারণ রয়েছে। কিছুদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভ্রাংশু একটি পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লেখেন, নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা না করে আত্মসমীক্ষা করা দরকার।

এরপরই এই বিষয়টি নিয়ে বিজেপি’র অন্দর মহলে বিতর্ক তৈরি হয়। শুভ্রাংশু তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বিজেপি’র নেতৃত্বের উপর নিজের ক্ষোভের কথাও জানান। তাঁর বাবা-মায়ের অসুস্থতার সময় বিজেপি নেতৃত্ব পাশে দাঁড়ায়নি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই সময় থেকেই একটা জল্পনা চলছিল শুভ্রাংশু তৃণমূলে ফেরার জন্য পা বাড়িয়ে রয়েছেন। তাই এই ধরনের পোস্ট তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে করেছেন।

সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে একটি জনসভা থেকে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একসময়ের সতীর্থ মুকুল রায়ের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘‘মকুল বেচারা থাকে কাচরাপাড়ায়। ব্যারাকপুর, জগদ্দল, ভাটপাড়া ওর নিজের জেলা। পাঠিয়ে দিয়েছে কৃষ্ণনগরে। মকুল শুভেন্দুর মতো এত খারাপ নয়।’’ উল্লেখ্য ২০ বছর পর মুকল রায় এবার ফের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তিনি এবারও প্রার্থী হতে চাননি। বরং সংগঠনের কাজ করতেই তিনি বেশি স্বচ্ছন্দ্য বোধ করবেন বলে বিজেপি’র শীর্ষ নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজেপি তাঁকে কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করে। মুকুল ওই কেন্দ্রে জয়ী হন। নির্বাচনী জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুকুল রায়কে নিয়ে করা সেদিনের মন্তব্য যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলেই মনে করেছিলেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

বিজেপি’তেও শুভেন্দুর যোগদান পর্বের পর থেকে মুকুল রায়কে অনেক বেশী নিষ্প্রভ দেখিয়েছে। মুকুলের তুলনায় শুভেন্দুকে অনেক বেশী গুরুত্ব দিতে দেখা যায় বিজেপি’র শীর্ষ নেতৃত্বকে। যদিও প্রকাশ্যে এই বিষয়ে কোনও পক্ষই কখনও মুখ খোলেনি। তবে রাজনৈতিক মহলের মতে এমনিতেই দিলীপ ঘোষের সঙ্গে মুকুল রায়ের অম্ল-মধুর সম্পর্ক ছিল, তারপর শুভেন্দু যোগ দেওয়ার পর দলের ‘ফোকাস’ সরে যায় মকুলের উপর থেকে। বিজেপি নেতৃত্বের ‘ব্লু আয়েড বয়’-এ পরিণত হয়ে যান শুভেন্দু। সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, শুভেন্দু আরএসএস-এর ভাবধারা যেভাবে দ্রুত রপ্ত করতে পেরেছেন, মুকুল এতদিনেও তা রপ্ত করতে পারেননি। এই বিষয়টিকেও যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।

যদি‍ও এই মুহূর্তে সব পক্ষই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাসপাতালের যাওয়ার বিষয়টিকে আলাদা করে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তবে রাজনীতির কারবারিরা কিন্তু বিষয়টিকে কেবলমাত্র ‘সৌজন্য’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। জল্পনা তৈরি হয়েছে মুকুল রায়ের পরিবারের সঙ্গে কি তৃণমূলের দূরত্ব কমছে আরা বিজেপি’র সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে?