দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। বুধবার (২৯জুলাই) ভারতের মাটি ছুঁল পাঁচটি রাফাল যুদ্ধ বিমান। এদিন দুপুর ৩টে নাগাদ হরিয়ানার আম্বালায় ভারতীয় বায়ুসেনার ঘাঁটিতে অবতরণ করে যুদ্ধ বিমানগুলি। সোমবার ফ্রান্স থেকে রওনা দেয় এই পাঁচটি যুদ্ধ বিমান। দীর্ঘ ৭০০০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে আম্বালার সামরিক বিমানঘাঁটিতে পৌঁছে ভারতীয় বিমান বাহিনীতে অর্ন্তভুক্ত হল। এবং ভারতীয় বিমানবাহিনীতে নতুন যুগের সূচনা হল- রাফাল যুগ।

কাকতলীয়ভাবে যে সময় রাফাল যুদ্ধ বিমানগুলি ভরতীয় বিমানবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হল তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ভারত-চিন সীমান্তে এখন যে ধরনের উত্তেজনা চলছে তাতে এই নতুন যুদ্ধবিমানগুলি ভারতের মনোবল কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই। এদিন আম্বালা বিমান ঘাঁটিতে বিমানগুলিকে এবং ভারতীয় বিমানবাহিনীর যে পাইলটরা বিমানগুলি উড়িয়ে নিয়ে এসেছেন তাঁদের স্বাগত জানান বায়ুসেনা প্রধান এয়ার মার্শাল রাকেশকুমার সিংহ ভদৌরিয়া।

আম্বালায় যুদ্ধবিমানগুলির অবতরণের একটি ভিডিয়ো ট্যুইট করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে তিনি একটি সংস্কৃত শ্লোক লিখে রাফালকে ভারতে স্বাগত জানান। মোদী যে শ্লোকটি লিখেছেন তা হল- ‘‘রাষ্ট্ররক্ষাসম পুণ্য, রাষ্ট্ররক্ষাসম ব্রতম, রাষ্ট্ররক্ষাসম যজ্ঞ, দৃষ্টো নৈব চ নৈব চ। নভ: স্পৃশ দীপ্তম… স্বাগতম।’’ বাংলায় যার অর্থ- রাষ্ট্রের সুরক্ষার চেয়ে বড় কোনও পুণ্য, ব্রত এবং য‌জ্ঞ নেই।…স্বাগত।


প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্যুইটারে লেখেন, ‘‘নিরাপদে আম্বালায় অবতরণ করেছে বিমানগুলি। রাফাল যুদ্ধবিমান মাটি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের সামরিক ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা হল। বহুমুখী ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিমানগুলি বায়ুসেনার শক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে।’’

রাফাল ভারতের মাটি ছোঁয়ার পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ট্যুইট করেন, ‘‘নিরাপদে আম্বালায় অবতরণ করেছে বিমানগুলি। রাফাল যুদ্ধবিমান মাটি ছোঁওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের সামরিক ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা হল। বহুমুখী ক্ষমতাসম্পন্ন এই বিমানগুলি বায়ুসেনার শক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে।’’ নিরাপদে রাফালকে ভারতে আনার জন্য ভারতীয় বায়ুসেনাকে অভিনন্দনও জানান রাজনাথ। সেইসঙ্গে লেখেন, ‘‘আমি অত্যন্ত খুশি যে একেবারে ঠিক সময়ে ভারতীয় বায়ুসেনার যুদ্ধক্ষমতা বৃদ্ধি পেল।’’ তিনি ‍আরও ট্যুইট করে লেখেন- ‘‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও নির্দিষ্ট সময় অস্ত্রশস্ত্র সমেত রাফাল ভারতে পৌঁছে দেওয়ায় ফ্রান্স সরকার, দাসো অ্যাভিয়েশন এবং অন্যান্য ফরাসি সংস্থাগুলিকেও ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্যই রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা সম্ভব হল। দীর্ঘদিন এই প্রক্রিয়া আটকে থাকার পর ফ্রান্স সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে তিনিই রাফাল কেনার সঠিক সিদ্ধান্ত নেন। এই সাহসিকতা এবং চটজলদি সিদ্ধান্তের জন্য ওনাকে ধন্যবাদ জানাই।’’

নির্ধারিত সময়ে ভারতের হাতে রাফাল তুলে দেওয়ার জন্য ফরাসি সরকার এবং প্রতিরক্ষা বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা দাসোকেও ধন্যবাদ জানান রাজনাথ।

কংগ্রেসের তরফেও ভারতীয় বিমানবাহিনীকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এদিন সকলের নজর ছিল রাহুল গান্ধী কি বলেন সে দিকে। অবেশেষে রাতে রাহুল গান্ধী ট্যুইট করে রাফালের জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর পুরনো প্রশ্নগুলোও তুলে ধরেছেন- ১. প্রত্যেকটি রাফাল বিমান কিনতে ৫২৬ কোটি টাকার পরিবর্তে ১৬৭০ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে কেন? ২. ১২৬টির পরিবর্তে কেন ৩৬টি বিমান কেনা হচ্ছে? ৩. হ্যালের পরিবর্তে কেন ঋণখেলাপি অনিল আম্বানীকে ৩০,০০০ কোটি টাকার বরাত দেওয়া হল?

২০০৭ সালে ইউপিএ সরকারের আমলে ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশনের কাছ থেকে ১২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি হয়েছিল কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নানা জটিলতায় প্রক্রিয়াটি আটকে ছিল। নরেন্দ্র মোদীর ক্ষমতায় আসার পর দাসোর সঙ্গে নতুন করে চুক্তি হয় ভারতের। ঠিক হয় তাদের কাছ থেকে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা হবে। সেই বাবদ ৫৯ হাজার কোটি টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মোদী সরকারের এই চুক্তি নিয়ে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিস্তর বিরোধিতা করে নির্বাচনী হাতিয়ার করতে চেয়েছিল কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা, উত্তাল হয়েছিল সংসদ।