
ভারতের ৭৪তম স্বাধীনতা দিবসের সকালে ঐতিহাসিক লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভাষণ দিলেন। এ নিয়ে টানা সাতবার স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে ভাষণ দিলেন তিনি। করোনার কারণে এবারে লালকেল্লা চত্বরের চিত্রটা ছিল ভিন্ন। সামাজিক দূরত্ব বিধি মাথায় রেখে বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল অনুষ্ঠানস্থল। এবারও নরেন্দ্র মোদী মাথায় পাগড়ি পরে ভাষণ দিয়েছেন।
এবছরে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ভালোভাবে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২০ সালে ভারতকে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতোই বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, সেগুলিই মূলত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে।
বিগত স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতাগুলি খুটিয়ে দেখলে দেখা যাবে তাঁর বক্তব্যে মূলত যে বিষয়গুলি উঠে আসত তার প্রধান ‘কি ওয়ার্ড’ গুলি হল ‘সরকার’, ‘নাগরিক’, ‘কৃষক’, ‘স্বপ্ন’, ‘যুব’ এবং ‘স্বাধীনতা’। এই শব্দগুলোই বারংবার তাঁর বক্তব্যে ঘুরে ফিরে আসত। এবছর কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের এই ধারায় অনেকটাই পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে |
এবছরে প্রধানমন্ত্রীর ৮৬ মিনিট দীর্ঘ বক্তৃতায় ‘আত্মনির্ভর’ এবং ‘করোনা’ শব্দদুটি সবচাইতে বেশি উচ্চারিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে জোর দিয়ে বলেন ভারতকে স্বনির্ভর বা ‘আত্মনির্ভর’ করা কতটা জরুরি এবং তিনি বলেন ‘আত্মনির্ভর’ এটি একটি সাধারণ শব্দ, এখন থেকে এই শব্দটিকেই প্রত্যেক দেশবাসীর ‘মন্ত্র’ করা উচিত। গত মে মাসে করোনা মহামারির প্রকোপ বাড়ার পর আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করার সময় প্রথম ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ বিষয়টি উথ্থাপন করেন মোদী।
এবছরের স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে তিনি পুরো বক্তব্যে ৩২ বার ‘আত্মনির্ভর’ শব্দটি উচ্চারণ করেছেন এবং এটিই সবচাইতে বেশিবার উচ্চারিত শব্দ ||
আত্মনির্ভর ছাড়া অন্য যে শব্দটি এদিন প্রধানমন্ত্রী সবচাইতে বেশিবার ব্যবহার করেছেন তা হল ‘করোনা। তাঁর বক্তৃতায় ২৫ বার এই শব্দটি উচ্চারিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে ভরসা দিয়ে বলেন, দেশ করোনার মতো মহামারির বিরুদ্ধে জিতবেই। তিনি তাঁর বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, করোনার প্রতিরোধে তিনটি ভ্যাকসিনের উপর ভারত কাজ করছে, বর্তমানে আলাদা আলাদা পর্যায়ে সেগুলির পরীক্ষা চলছে।
সীমান্তে উত্তেজনা:
কোনও দেশের নাম না করেই প্রধানমন্ত্রী কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, যারা নিয়ন্ত্রণ রেখা বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় ভারতকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে তারা উচিত জবাব পেয়েছে। তিনি বলেন, ভারত কি করতে পারে লাদাখে তার প্রমাণ পেয়েছে গোটা বিশ্ব। সন্ত্রাসবাদ কেবল ভারতে নয় প্রতিবেশী দেশগুলোতেও সমস্যা সৃষ্টি করছে, যখন প্রধানমন্ত্রী এই কথা বললেন তখন আগের বছরের স্বাধীনতা দিবসের কথা মনে পড়ে যায়। গত বছরও স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ৯২ মিনিটের বক্তৃতায় এই বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন।
এবারের বক্তৃতায় তিনি ১১ বার ‘সীমান্ত’, ১০ বার ‘সেনাবাহিনী’ শব্দ উচ্চারণ করেন।
গ্রামীণ ক্ষেত্র:
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর বক্তৃতায় কৃষি বাজারের সংস্কারের বিষয়টি উথ্থাপন করেন। লালকেল্লায় তাঁর বক্তৃতায় ২২ বার উচ্চারিত হয়েছে ‘কৃষকদের’ এবং ১৫ বার উচ্চারিত হয়েছে ‘গ্রামীণ’ শব্দটি। এছাড়াও স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী রাম মন্দির নির্মাণের বিষয়, জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বিলোপের বিষয়গুলি উত্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন তিনি জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন করানোর বিষয়ে বদ্ধ পরিকর।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার বাকি অংশে উঠে এসেছিল তাঁর সরকার দেশবাসীর জন্য কি করছে এবং ভবিষ্যতে কি করতে চান সেই সব বিষয়। তাঁর বক্তৃতায় ‘মহিলা’ (২১ বার), ‘স্বাধীনতা’ (২৪ বার), ‘গরীব’ (১৫ বার), ‘উন্নয়ন’ (১৮ বার) প্রভৃতি শব্দগুলি ঘুরে ফিরে উচ্চারিত হয়েছে।