সোমবার অসমে এনআরসি’র চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশিত হল। অর্থাৎ ভারতীয় নাগরিকদের তালিকা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। ভারতের ৭০ বছরের ইতিহাসে এটি একটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে। আগামীদিনে বহিরাগত ঢুকিয়ে দেশ দখলের পদ্ধতিটি (যা এখন পশ্চিম ইউরোপে চলছে) ভারতে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল।
অসমে ১৯৫১ সালে মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ২৪.৭%, ১৯৬১ সালে ২৫.২%, ১৯৭১ সালে ২৪.৬% অর্থাৎ ১৯৫১ থেকে ১৯৭১ স্বাধীনতার পর প্রায় ২৫ বছরে অসমে মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত বাড়েইনি। ১৯৮১তে অসম আন্দোলনের জন্য জনগননা হয়নি। ১৯৯১-এর জনগণনায় দেখা গেল মুসলিম জনসংখ্যার অনুপাত বেড়ে হয়েছে ২৮.৪%। অর্থাৎ আগের ২০ বছরে যে অনুপাত বিন্দুমাত্র বাড়েনি, পরের ২০ বছরে তা বেড়ে গেল ৪%। এত বড় জনসংখ্যার আক্রমণে অসমের মানুষ যে সন্ত্রস্ত হবেন তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। জনগণনা হবার অনেক আগেই অসমের মানুষ বুঝতে পারছিলেন এই আক্রমণ। ফলে ১৯৭৯ থেকে শুরু হয় অসমের ছাত্রদের আন্দোলন। এই রক্তঝরা আন্দোলন শেষ হয় ১৯৮৫ সালে। কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী’র উপস্থিতিতে অসম চুক্তি হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী মূলত ১৯৭১কে ভিত্তি বর্ষ ধরে অসমে বিদেশী চিহ্নিতকরণের কাজে হাত দেওয়া হয়। সেটাই National Register of Citizens সংক্ষেপে এনআরসি (NRC)। সেই চুক্তি অনুযায়ী ৪০ বছর পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এই তালিকা প্রকাশিত হল। এর মধ্যে বিজেপি কোথাও জড়িত নেই।
১৯৭১-এর ২৪.৫% মুসলমান জনসংখ্যা ২০১১-তে বেড়ে হয়ে গেল ৩৪.২%। অর্থাৎ ১০% বেড়ে গেল মুসলিম জনসংখ্যা। ২০১৮-তে তা নিশ্চই বেড়ে হয়েছে ১২%। এবার এনআরসি’তে বিদেশী জনসংখ্যা আপাতত চিহ্নিত হয়েছে ৪০ লক্ষর কিছু বেশি। অর্থাৎ অসমের জনসংখ্যার ১২%এর মতন। প্রায় মুসলিম জনসংখ্যার বৃদ্ধি আর এনআরসি’র বিদেশী তালিকা মিলে যাচ্ছে! অবশ্যই কিছু কিছু বাংলাদেশী আছেন, এদের সংখ্যা ঐ ৪০ লক্ষ’র মধ্যে ৪-৫ লক্ষ হচ্ছে। সুতরাং মুসলমান বাড়িয়ে পূর্ব ও উত্তরপূর্ব ভারত দখলের পরিকল্পনা ও তাতে ‘সেকুলার’ বামপন্থীদের সমর্থনে বড় আঘাত হানল এনআরসি।
আরও পড়ুন: এই মুহূর্তে বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন বড় প্রয়োজন
মনে রাখতে হবে ২০১৫-র ৭ই সেপ্টেম্বরে সংশোধিত হওয়া Passport Act এবং Foreigners Act-এর জন্য বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের অসম ও ভারতে থাকার আইনি অনুমতি দেওয়া আছে। নাগরিকত্ব বিল ২০১৬ পাশ হয়ে গেলে হিন্দু বাঙালিরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। এবার কাজ বাংলাদেশীদের বিতাড়ন। পরের কাজ পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চালু করা।