মিঠুন চক্রবর্তী’র বিজেপিতে যোগদান নিয়ে জল্পনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। এই জল্পনা শুরু হয়েছিল মূলত ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে, যে দিন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত মুম্বইতে মিঠুন চক্রবর্তীর বাড়ি গিয়েছিলেন। এর পর জানা যায় রবিবার ব্রিগেডে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় তিনি উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু যোগদান করছেন কি না সে বিষয়ে কোনও পক্ষ থেকেই পরিস্কারভাবে কিছু বলা হচ্ছিল না। ব্রিগেডের জনসভার আগের দিন, অর্থাৎ শনিবার গভীর রাতে কলকাতায় মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে কৈলাস বিজয়বর্গীয়র দেখা করা সেই জল্পনাকে আরও বেশি করে উস্কে দিয়েছিল।

অবশেষে ব্রিগেডের মঞ্চে সব জল্পনার অবসান। মহাগুরু ধুতি-পাঞ্জাবিতে বিজেপি’র পতাকা হাতে নিয়ে দলে যোগদান করলেন এবং এই নির্বাচনের প্রচারে যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন তাও জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি এও জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদীর মতো একজন নেতার সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নেওয়া তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো।

সিপিআইএম একসময় চাঁদা তোলার জন্য মিঠুন চক্রবর্তীকে মঞ্চে তুলে ব্যবহার করেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মিঠুনকে প্রয়োজনে ব্যবহার করেছেন। চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় তিনি রাজ্যসভার সদস্যপদ এবং তৃণমূলের সংস্পর্ষ ত্যাগ করেন। শুধু তাই নয় রাজনীতি থেকে সন্নাস নিয়ে ছিলেন।

মিঠুন চক্রবর্তী তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে কোনও রাজনৈতিক দল বা কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে আক্রমণ করেন নি। বরং তিনি বাঙালি হিসেবে যে গর্বিত এবং গরিব মানুষের জন্য কাজ করার স্বপ্ন দেখেন সেটা আরও একবার এদিন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলে গলেন। এদিন তিনি বলেন, ‘‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, রানি রাসমণি, বিদ্যাসাগর আসল বাঙালি। যারা মানুষের হক কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে, সেখানে আমাদের মতো কিছু লোক বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে যাবে।’’ তাঁর এই বক্তব্যকে অনেকেই যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ এবং ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছে। পাশাপাশি এই নির্বাচনের প্রচারে তিনি কোন ডায়লগ বলবেন সেটাও জানিয়ে দিলেন, ‘‘আমি জলঢোঁড়াও নই, বেলেবোড়াও নই। আমি জাত গোখরো, এক ছোবলে ছবি’’। এই ডায়লগ নিয়েই এখন নতুন করে শুরু হয়েছে জল্পনা। মহাগুরু কাকে ‘ছোবল’ মারার ইঙ্গিত দিলেন!

ব্রিগেডের সভা শেষে মঞ্চের পিছনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একান্তে ১৫ মিনিট কথা বলেন মিঠুন। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে আমার খুব ভাল আলোচনা হয়েছে। সব কথা তো প্রকাশ্যে বলা যায় না।’’ তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় বিজেপি যথেষ্ট জায়গা তৈরি করেছে। বাংলার মানুষ বিশ্বাস করছে, ওরা রাজ্যের জন্য ভাল কিছু করবে। তারা ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেটা কখনও মিথ্যে হতে পারে না। তার মধ্যে কিছু সততা থাকে।’’ মিঠুন বরাবরই একটি কথা বলেন, তিনি ‘রাজনীতি’ নয় ‘মানবনীতি’তে বিশ্বাসী। তিনি এদিনও বলেন, ‘‘সকলেরই একটা পতাকার প্রয়োজন হয়। প্রধানমন্ত্রী আমায় ডেকে যখন কথা বললেন, আমি বললাম, আমি বাংলার জন্য কাজ করতে চাই। আমি বাংলাকে ভালবাসি।’’

এদিন মিঠুনকে যথেষ্ট ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে। তিনি কোনও দ্বিধা না করেই বলেন, আজকের দিনটা তাঁর কাছে স্বপ্নের মতো। সংবাদমাধ্যম জিজ্ঞাসা করে, তাহলে কি তৃণমূলে থাকার দিনগুলো ‘দুঃস্বপ্ন’ ছিল? তিনি এবিষয়ে পরিস্কারভাবে কিছু না বললেও তিনি বলেন, ‘‘আগের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল’’। তিনি বলেন, ‘‘আমি কখনও মমতা’দিকে বলিনি, আমায় রাজ্যসভায় দিন। উনি আমায় ডেকে বলেছিলেন। তার আগেও একবার বলেছিলেন। আমি তখন রাজি হইনি।’’ এরই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমার ভাবনাটা একই আছে। দলের নামটা শুধু বদলেছে। আগাগোড়াই মানুষের জন্য কাজ করতে চেয়েছি। সেই আদর্শ থেকেই বামপন্থী রাজনীতিতে জড়িয়েছিলাম। এখনও তাই করতে চাই।’’

এদিকে সোশ্যাল মিডিয়াতে মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে নানারকম বিদ্রুপ চলছে। বামপন্থীরা, তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকরা নানা রকম মিম বানিয়েছেন।

তবে কলকাতায় মিঠুন চক্রবর্তীর ঘনিষ্ট বলে পরিচিত অনেকেই বলছেন, সিপিআইএম একসময় চাঁদা তোলার জন্য মিঠুন চক্রবর্তীকে মঞ্চে তুলে ব্যবহার করেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মিঠুনকে প্রয়োজনে ব্যবহার করেছেন। চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে তাঁর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় তিনি রাজ্যসভার সদস্যপদ এবং তৃণমূলের সংস্পর্ষ ত্যাগ করেন। শুধু তাই নয় রাজনীতি থেকে সন্নাস নিয়ে ছিলেন। এখন বিধানসভা নির্বাচনের সময় তিনি বিজেপি’তে যোগদিয়ে ফের রাজনীতির ময়দানে। এর পিছনে বাংলার সাধারণ মানুষের জন্য কিছু করার তাঁর সেই পুরনো ভাবনাটাই আরেকবার কাজ করেছে বলেই মনে করছেন মিঠুনের ঘনিষ্টমহল। তবে তাঁরা এটাও মনে করছেন, যদি কাজ করতে না পারেন তাহলে বিজেপি’র সঙ্গ ছাড়তেও দ্বিতীয়বার ভাববেন না মহাগুরু। কারণ, মিঠুন এরকমই।