হিমালয়ে ট্রেকিং করতে চাইলে যেকোনও মানুষের প্রথম পছন্দের জায়গা উত্তরাখন্ড। কিন্তু আজকাল উত্তরাখন্ডের পোর্টার এজেন্সির এত ঝামেলা বেড়েছে যে অনেকেই ট্রেকিংয়ের জন্য হিমাচলকে বেছে নিচ্ছেন। অনেক এমন ট্রেকরুট আছে যেখানে মিউল মাল নিয়ে যায়। ফলে ঝামেলা অনেক কম। তাছাড়া হিমাচলে আমাদের পাহাড়ি সাথীরা এখনও অনেক ভালো। তাই এবারে ‘বিতর্ক’র পাঠকদের জন্য থাকল হিমাচলের কিছু ট্রেকরুট –
পারাং লা (৫৫৮০ মি)
হিমালয়ে যত ট্রেকরুট আছে তার মধ্যে এটি অনবদ্য। এই রাস্তা আপনাকে স্পিতি হিমালয় থেকে নিয়ে যাবে লাদাক হিমালায়ে। হিমাচলের কাজার কাছে কিব্বের গ্রাম থেকে যাত্রা শুরু। শেষ হবে লাদাকের এক বিখ্যাত লেক সো-মোরারি’এর পাশে কারজোক গ্রামে। সেখান থেকে গাড়ি করে লে শহরে চলে যাওয়া বা সো-কার লেক হয়ে আরেকটি ছোট ট্রেক করে পাং চলে আসা যায়। পুরো রাস্তাতেই মিউল চলে। প্রথম ট্রেকটি সাধারণত ন’দিনের। তবে চাইলে দিন দুই কমেও শেষ করা যায়। এই ট্রেকটি উলটো দিক থেকে মানে কারজোক থেকেও শুরু হয়। পুরো রাস্তাটা অনেকটা উচ্চতা দিয়ে যায় বলে জলের উৎস কম।
রুট > মানালি – কাজা/ কিব্বের – ডুমলা – থালটক – বনরোজেন – লারগিয়াপ ভায়া পারাং লা – রাছু লামো – নরবু সুমদো – সো মোরারি – কারজোক।
বেস্ট টাইম > জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর।
সারাউঙ্গা লা (৪৭০০ মি)
পিন পার্বতী উপত্যকার অন্যতম সুন্দর ট্রেক এটি। রাস্তা যাচ্ছে মনিকরণ হয়ে টস গ্রামে। মনিকরণে এক রাত কাটিয়ে, উষ্ণ প্রস্রবনে একটা স্পা নিয়ে জীপে চলে আসুন টস গ্রামে। এখান থেকে হাঁটা শুরু টস নদীকে পাশে নিয়ে। প্রথমে উপত্যকাটি সংকীর্ণ থাকলেও, যত ওপরের দিকে এগোতে থাকবেন তত বিস্তারিত হবে। পথে অনেকগুলি অপূর্ব সুন্দর বুগিয়াল পাবেন। এই উপত্যকার শেষে রয়েছে টস গ্লেসিয়ার, যার ওপরেই সারাউঙ্গা লা। আপনার পাস ক্রস’এর সাক্ষী হয়ে থাকবে হিমাচলের দুই মহিমাময় পর্বত papsura(৬৪৫২ মি) ও white sail(৬৪৪৬ মি)। সারাউঙ্গা পাস আপনাকে পার্বতী উপত্যকা থেকে নিয়ে আসবে লাহুল উপত্যকায়।
রুট > মানালি – মনিকরণ – টস গ্রাম – বুদ্ধ বন – সারাম থাচ – সামশি থাচ – কুতা থাচ – পুতরুনি ভায়া সারাউঙ্গা পাস – ছোটাধারা – মানালি
বেস্ট টাইম > মিড জুন থেকে মিড সেপ্টেম্বর।
পিন পার্বতী পাস (৫২০০ মি)
‘পিন পার্বতী পাস’ পার্বতী উপত্যকার উচ্চতম ও সুন্দরতম গিরিপথ। এই পথে একজন ট্রেকার যা যা চায় সে সব পায়। সবুজ বুগিয়াল, সুন্দর ছোট পাহাড়ী গ্রাম, উষ্ণ প্রস্রবন, উচ্ছল নদী, চঞ্চল ঝরণা, স্বর্গীয় লেক, চ্যালেঞ্জিং হাইট। এক কথায় পরিপূর্ন ট্রেক। এই পথ আপনাকে নিয়ে আসবে সজল সবুজ পার্বতী উপত্যকা থেকে রুক্ষ কঠিন পিন ভ্যালিতে। একই সঙ্গে দেখা যাবে প্রকৃতির দুই রূপ। দেখা হবে পার্বতী নদীর উৎস মানতালাই। বিস্তীর্ণ হিমালয়ের খুব কম ট্রেকেই পাওয়া যাবে এই ট্রেকের মতো এতো ভ্যারিয়েশান। চাইলে কাজার দিক থেকে শুরু করে মনিকরণেও শেষ করা যায়।
রুট > মানালি – মনিকরণ – বারসিয়ানি – ক্ষীরগঙ্গা – টুন্ডাভুজ – ঠাকুরকুঁয়া – ওডিথাচ – মানতালাই লেক – বেস I – বেস II ভায়া পাস – উইচুরাং থাচ – মুদ গ্রাম – কাজা – মানালি।
বেস্ট টাইম > আগষ্ট – সেপ্টেম্বের।
সাচ পাস (৪৫০০ মি)
হিমাচলের চাম্বাভ্যালি থেকে খুব কম ট্রেক রুট আছে। সাচ পাস তারমধ্যে সেরা। এই ট্রেক রুট গিয়েছে হিমাচলের দুটি অনবদ্য ভ্যালি হয়ে, চাম্বা ও পাঙ্গি। পাঙ্গি ভ্যালি হিমাচলের অন্যতম রিমোট রিজিয়ন তাই এখানে এখনও “nature is still virgin” বলা হয়। হাঁটা পথে পাঁচ দিনের এই ট্রেক আপনাকে পৌঁছে দেবে প্রকৃতির আপন কোলে। পথে পড়বে চির সবুজ বন আর নীল আকাশের দিগন্তে দেখতে পাবেন বরফে ঢাকা পর্বতমালা। এই ট্রেকটি যত না আডভেঞ্চারপ্রেমীর তার থেকেও বেশি প্রকৃতিপ্রেমীর।
রুট > চাম্বা – ট্রেলা – সাতরুন্দি – বিন্দ্রাবনি ভায়া সাচ পাস – কিলার – পুরথি – রাওলি – মানালি ভায়া কেলং
বেষ্ট টাইম > মে – জুন, সেপ্টেম্বের – অক্টোবার।
ছোবিয়া পাস (৪৯৬৬ মি)
এই পথটি অতি পুরানো গদ্দিয়ালাদের চলার পথ। রুক্ষ লাহুল ভ্যালি থেকে ভেড়া ছাগল নিয়ে গদ্দিয়ালারা এই সুউচ্চ গিরিপথ অতিক্রম করে চলে আসত শ্যামল সবুজ চাম্বা ও কাংড়া ভ্যালিতে। শীতের শুরু হলে একই পথে ফিরে যেত নিজেদের গ্রামে। সেদিনও এই পথের সৌন্দর্য তাদেরকে যেমন মোহিত করত, তেমনি আজও আমাদের অবাক করে। একে ঘিরে রেখেছে শুভ্র ধবল ধৌলাধার গিরিশ্রেণী। পথ নেমে গিয়েছে মনিমহেশ লেকের দিকে। যার পাড়ে আছে বিখ্যাত মনিমহেশ কৈলাশ পর্বত। যেখানে রুদ্রপানী শিবের অধিষ্ঠান।
রুট > মানালি – ত্রিলোকনাথ মন্দির – ক্যাম্প ১ – ছোবিয়া পাস বেস – ক্যাম্প ২ ভায়া ছোবিয়া পাস – ক্যাম্প ৩ – হাডসার > রুট ১. ভারমোর / রুট ২. ধানচু – মনিমহেশ লেক – হাডসার – ভারমোর
বেষ্ট টাইম > জুলাই – সেপ্টেম্বের ।