শনিবার রাজ্যে চতুর্থ দফা নির্বাচনে কোচবিহারের শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ৪ জনের মৃত্যু ঘিরে শুরু হয়েছে রজনৈতিক তরজা। তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপি’কে এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দায়ী করে আক্রমণ শানাচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি অমিত শাহকে দায়ী করেছেন। অন্যদিকে বিজেপি কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাগাতার প্ররোচনামূলক বক্তব্য রাখার ফলে এদিনের এই ঘটনা ঘটেছে বলে তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও শীতলকুচিতে চার জনের মৃত্যু নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেন কড়া ভাষায়।

এদিন চতুর্থ দফা ভোট চলাকালীন রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারে আসেন নরেন্দ্র মোদী। সেই প্রচারের অংশ হিসেবে শিলিগুড়িতে জনসভা করেন তিনি। সেই জনসভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘কোচবিহারে যা হয়েছে, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের জন্য আমি দুঃখপ্রকাশ করছি। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমরা সমবেদনা জানাচ্ছি।’’ এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে মোদী বলেন ‘‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো দিদি’র গুন্ডারা ছাপ্পা ভোট দিতে পারছে না, তাই দিদি এত ক্ষুব্ধ’’। মোদী বলেন, ‘‘দিদি জনসভায় নিজের ছাপ্পা ভোট গ্যাংকে ট্রেনিং দিচ্ছে, ট্রেনিং!  ১০ বছর একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থাকার পর তিনি শেখাচ্ছেন, কেমন করে নিরাপত্তা বাহিনীকে ঘেরাও করতে হয়, কীভাবে নিরাপত্তা বাহিনীকে পেটাতে হয়, আর কেমন করে বুথে হামলা করতে হয়।’’

শীতকুচিতে গুলিচালনার ঘটনার পরই মোদীর জনসভাটি ছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ভাষণে এদিনের এই ঘটনাটি বেশি গুরুত্ব পায়। মোদীকে নির্বাচনে হিংসা, হুমকি দেওয়া, ছাপ্পা ভোট নিয়ে আক্রমণ শানিয়ে গেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি’র প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়তে দেখে দিদি আর তৃণমূলের গুন্ডারা ঘাবড়ে গিয়েছে। গদি চলে যাচ্ছে দেখে দিদি এই স্তরে নেমে এসেছেন।’’ পাশাপাশি অনেকটা হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, ‘‘আমি দিদিকে, তৃণমূলকে আর ওদের গুন্ডাদের সাফ সাফ বলছি, ওরা যা চাইবে তাই হবে এমনটা আর চলবে না বাংলায়।’’ এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের কাছে শীতলকুচির ঘটনা তদন্তের আর্জিও জানিয়েছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘কোচবিহারে যা হয়েছে তাতে দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হোক’’।

শিলিগুড়ির পর এদিন নরেন্দ্র মোদীর জনসভা ছিল কৃষ্ণনগরে, সেখানে তিনি বলেন, দিদি মনে রাখবেন, ‘‘এটা ২০২১ সালের বাংলা। গণতন্ত্রের সঙ্গে আর খেলা করতে দেওয়া যাবে না। কেন্দ্রীয় বাহিনী গোটা দেশের নির্বাচনে যায়। সমস্যা কেন্দ্রীয় বাহিনীর নয়, আপনার হিংসার। ছাপ্পা ভোট দিতে না পারায় সমস্যা।’’ তিনি এই জনসভা থেকে আরও বলেন, ‘‘দিদির কাছে মানবিকতার আশাও ছেড়ে দিয়েছে বাংলা। মা, বোনেদের চোখের জলের কারণ হয়ে উঠেছে তৃণমূল। দিদি এখন পুরনো খেলা শুরু করেছেন, বাংলায় দিদি আর তৃণমূল হিংসার চেষ্টা করছেন। দিদি নির্বাচন কমিশনকে গালি দিচ্ছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে গালি দিচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীকে গালি দিচ্ছেন, এখন নিজের দলের বুথ এজেন্টদেরও গালি দিচ্ছেন।’’ মোদী বলেন, ২ মে আসল পরিবর্তন আসছে। কালবৈশাখীতে উড়ে যাবে তৃণমূল।