বুধবার কাঁথির রেলস্টেশনের প্রভূতি মাঠে জনসভায় যোগ দিয়ে ফের কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কাটমানি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট নিয়ে আক্রমণের পাশাপাশি তৃণমূলের ‘বহিরাগত’ ইস্যুটিকেও খন্ডানোর চেষ্টা করেছেন মোদী। অমিত শাহ মঙ্গলবার মেদিনীপুরে যে কথা বলেছিলেন এদিন নরেন্দ্র মোদী ফের আরেকবার সেই কথা মনে করিয়ে দেন- বিজেপি ক্ষমতায় এসে এরাজ্যের ভূমিপুত্রকেই মুখ্যমন্ত্রী করবে।

এদিন মোদী যা বললেন তার কিছু অংশ দেখে নিই এক নজরে-

  • এবার বিজেপি সরকার। বার বার বিজেপি সরকার। এ বার জোরে জোরে পদ্মে ছাপ। এখানকার জমায়েত আপনার উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
  • দিদি, আপনি খেলা খেলেন। আমরা খেলা করব না। আমরা সেবা করব। বিজেপি-র একটাই মন্ত্র, গরিবের রোজগার, গরিবের বাড়ি, গরিবের সম্মান। দিদি, বাংলার মানুষ আপনার খেলা বুঝে গিয়েছে। আপনারা দেখেছেন, নন্দীগ্রামের বদনাম করার জন্য একটার পর একটা মিথ্যে কথা বলে চলেছেন। নন্দীগ্রাম আপনাকে অনেক কিছু দিয়েছে। সেই নন্দীগ্রামের বদনাম করার জন্য একটার পর একটা মিথ্যে কথা বলে চলেছেন। যে নন্দীগ্রাম আপনাকে অনেক কিছু দিয়েছে, সেই নন্দীগ্রামের মানুষেরই বদনাম করছেন? পুরো ভারতবর্ষের সামনে তাঁদের বদনাম করছেন! নন্দীগ্রামের আত্মাভিমানী মানুষ এর জবাব দেবেন। তৃণমূলের সরকার কাটমানি, কমিশন, তোলাবাজি আর সিন্ডিকেটের জোরে চলেছে। তৃণমূল সরকার হিংসা আর অত্যাচারের অন্ধকারের সরকার। দিদি অন্ধকার দিয়েছে শুধু। বিজেপি-র সরকার সোনার বাংলা দেবে। আমাদের স্বপ্ন সোনার বাংলা।
  • মেদিনীপুরের প্রতিটি গ্রাম থেকেই মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়েছে। সাঁওতাল বিদ্রোহ, চুয়াড় বিদ্রোহ, তমলুক জাতীয় সরকার, সব মেদিনীপুরেই হয়েছিল। এখানে বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, মাতঙ্গিনী হাজরা, সুশীলকুমার ধাড়ার মতো স্বাধীনতা সংগ্রামীরা জন্ম নিয়েছিলেন। কয়েক বছরের মধ্যে স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূর্ণ হবে। আজ যে যুবকের বয়স ২৫ বছর, যারা এই ভোটে প্রথমবার ভোট দেবে, তাদের জন্য এ হল এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্লোগান।
  • ২ মে দিদি চলে যাবেন। দিদি মেদিনীপুরে এসে নানা বাহানা দেখাচ্ছেন। যে পরিবারগুলো আমফানে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যাদের তৃণমূল লুঠ করেছে, তাদের কোনও জবাব দিতে পারেননি দিদি। কেন্দ্রীয় সরকার ত্রাণ পাঠিয়েছিল। ভাইপো লুটে নিয়েছে। আমফানে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ আজও ভাঙা ছাদের নীচে রাত কাটাচ্ছেন। এদিকে ভোটের আগে বলছেন, সরকার দুয়ারে দুয়ারে। পশ্চিমবঙ্গের শিশুরাও দিদির খেলা বুঝে গিয়েছে, ২ মে পশ্চিমবঙ্গ দিদিকে দরজা দেখাবে।
  • অসমে দেখুন, উন্নয়নের জোয়ার বইছে। জঙ্গিরা পর্যন্ত মূলস্রোতে ফিরছেন। আর এখানে বোমাবাজিতে বাড়িঘর পর্যন্ত উড়ে যাচ্ছে। মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। দিদি বসে বসে দেখছেন। বাংলায় শান্তি চাই। বন্দুক, বোমা থেকে মুক্তি চাই। আর বিজেপি সেই কাজটাই করবে। দিদি, ও দিদি। আমাকে বারবার বলতে হয়, কারণ উনি কারও কথা শোনেনই না।
  • যে পশ্চিমবঙ্গ পুরো ভারতকে বন্দে মাতরম-এর স্লোগান শিখিয়েছে, দিদি সেই বাংলায় দাঁড়িয়ে বহিরাগত বলছেন? বঙ্কিমচন্দ্র, বিদ্যাসাগররা বলেছেন, আমরা সবাই ভারতের সন্তান। যে বাংলা থেকে গুরুদেব সব ভারতবাসীকে এক মালা পরিয়েছিলেন, এই বাংলা থেকেই যে গুরুদেব পাঞ্জাব সিন্ধু গুজরাত মারাঠা… বলেছিলেন, আমরা সেটাই বলি সবসময়। সেই বাংলায় আপনি বহিরাগত বলছেন দিদি? গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ভূমিতে কাউকে বহিরাগত হিসেবে দেখতেন না। বাংলায় যে বিজেপি’র সরকার আপনারা বানাতে চলেছেন, তার মুখ্যমন্ত্রী এখানকার ভূমিপুত্রই হবেন।
  • কেন্দ্রীয় সরকার পেটুয়াঘাট বন্দরকে আধুনিকীকরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এতে এখানকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ মিলবে। আপনাদের যে উপকূল রয়েছে, তাতে আপনাদের জন্য বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার নানা প্রকল্পের মাধ্যমে পর্যটনের প্রসার ঘটাচ্ছে। আর এর লাভ মেদিনীপুরের মানুষ পাবেন। এখানকার নাগরিক তার সুবিধা পাবেন।
  • বাংলায় বিজেপির ইস্তাহারও প্রকাশিত হয়েছে। এখানকার বিজেপি নেতাদের তার জন্য ধন্যবাদ জানাই। এখানকার মানুষের মনের কথাই ইস্তাহারে প্রকাশিত হয়েছে। মেদিনীপুর ভারতের কৃষিতে অনেক বড় স্থান নিয়ে আছে। এখানে চিংড়ির অত্যাধুনিক চাষ হচ্ছে। কিন্তু দিদি এখানে কৃষকদের ফুড প্রসেসিং, কোল্ড স্টোরেজের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন।
  • রাজ্যে সমস্ত প্রকল্পে কাটমানি বন্ধ করবে বিজেপি। উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা দেবে বিজেপি। মাঝখানে দালাল, ফড়ে কেউ থাকবে না। কোনও তোলাবাজি থাকবে না। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার বাড়ি বাড়ি শৌচালয় দিয়েছে, বিদ্যুৎ দিয়েছে, গ্যাস দিয়েছে। করোনার সময় মহিলাদের আর্থিক সাহায্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দে‍ওয়া হয়েছে। জল দেওয়ার জন্য ‘ঘর ঘর জল’ প্রকল্পে কাজ করছে। কিন্তু এখানকার সরকার সে সব করতেই দিচ্ছে না। তৃণমূল সরকারের আপনাদের জন্য কোনও চিন্তা নেই।
  • স্বাধীনতার ৭৫ বছর পালনে বাংলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। এই ভোটে যাঁরা প্রথমবার ভোট দেবেন, তাঁদের জন্যও এই সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুবকদের সামনে আগামী ২৫ বছরের পশ্চিমবঙ্গ নির্মাণের দায়িত্ব। তার জন্যই আসল পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সোনার বাংলা গড়ার কথা এখানকার সবাই শুনেছেন। বাংলার প্রতি ঘর থেকে, সবার মুখে একটাই আওয়াজ উঠছে। ২ মে দিদি যাচ্ছে।