এবারের (২০২১) বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল যা হয়েছে তাতে কারোরই হিসাবনিকাশ, অনুমান, আশা-আশঙ্কা, আকাঙ্খা, পর্যবেক্ষণ ও সমীক্ষা মেলেনি। শাসকদল ক্ষমতায় আবার ফিরতে পারবে কিনা সে বিষয়ে সংশয়ে ছিল। বিজেপি আশায় ছিল যে ২০০-র বেশী আসন নিয়ে সরকার তৈরি করবে। বাম ও কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ আশা করেছিল, তারা টিএমসি ও বিজেপির বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু দেখা গেল টিএমসি বিপুল সাফল্য পেয়েছে, যা তাদের নিজেদের কাছেও ছিল স্বপ্নাতীত। অন্যদিকে বিজেপি’র সরকারে যাওয়ার আশা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। বাম-কংগ্রেসের ঝুলিতে জুটেছে শূন্য আসন, ফলে তাদের অস্তিত্বের সংকট আরও গভীর হয়েছে। বিজেপি’র পরাজয় ও টিএমসি’র বিশাল জয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলি বাংলার রায়ের বন্দনায় মেতে উঠেছে। সমস্বরে বলছে যে বাংলার জনগণ এবার খুবই সুচিন্তিত রায় দিয়েছে। বাংলার জনগণ ঠিক কতটা সুচিন্তিত রায় দিয়েছে সেটাই এই নিবন্ধের মূল আলোচ্য বিষয়।       

বিজেপি আপাতত পরাস্ত বটে, কিন্তু হিন্দুত্বের রাজনীতি নয়

এবারের নির্বাচনী ফলাফলের একটাই ইতিবাচক দিক আছে। সেটা হল বিজেপি সরকার তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এই ফলাফলের আরও কয়েকটা দিক আছে যা নেতিবাচক এবং আমাদের বাংলার পক্ষে (ভারতের পক্ষেও) যথেষ্ট চিন্তাজনক ও উদ্বেগজনক। তাই এই ফলাফলে আমাদের উল্লসিত হওয়ার মতন কিছু দেখছি না। প্রথমে ধরা যাক বিজেপির ব্যাপারটা।

বিজেপি ৭৭টি আসনে জয়ী হয়েছে যা মোট আসনের প্রায় অর্ধেকের অর্ধেক। গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায়ও অনেক কম। কারণ গত লোকসভা নির্বাচনে ১২১টি বিধানসভা কেন্দ্রে তারা লিড পেয়েছিল। এই ফল বিজেপির পক্ষে তাই খুব খারাপ। বলা বাহুল্য যে ওদের পক্ষে যেটা খারাপ বাংলার পক্ষে সেটা নিশ্চয়ই ভাল। কারণ, আমরা গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও বহুত্ববাদী বাংলা চাই। কিন্তু এই ফলাফলে আমাদের কি দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগের এতটুকু অবসান হয়েছে? এর উত্তর হল ‘না’, একদমই ‘না’। কারণ, ওরা সরকারে যেতে না পারলেও ওদের জনসমর্থন ও শক্তি বিশেষ কমেনি। এটা বোঝা যায় ওদের প্রাপ্ত ভোটের শতাংশের হিসাবে। তাদের প্রাপ্ত ভোট হল ৩৮.০৯% যা গত লোকসভার (২০১৯) ভোটের থেকে মাত্র ২.৫% কম। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটের (২০১৬) সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাচ্ছে তাদের বিশাল অগ্রগতি ঘটেছে। গত নির্বাচনে বিজেপি ভোট পেয়েছিল ১১%, এবার পেয়েছে ৩৮%। অর্থাৎ ভোট বেড়েছে ২৭% (সাতাশ শতাংশ)। গত বিধানসভা ভোটে মাত্র ৩টি (তিনটি)আসন পেয়েছিল, এবার জয় পেয়েছে ৭৭টিতে। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় বৃদ্ধি ২৮গুণ (আঠাশ গুণ), আর শতাংশের বিচারে ২৮০০% (দু’ হাজার আটশো শতাংশ)। আরও একটি শতাংশের হিসেব বিশেষ উল্লেখযোগ্য যা বিজেপি’র বিপদ বুঝতে আমাদের ধারণা স্পষ্ট করবে। এবার তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির প্রাপ্ত মোট ভোট হল মোট ৮৬% (৪৭.৯% + ৩৮.০৯%)। এটা প্রমাণ করে যে বিজেপির ধর্মের ভিত্তিতে মানুষকে ভাগ করার হীন রাজনীতি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। এসব আশাতীত সাফল্য অর্জন করার পরেও মূল কাজের কাজটি তারা এবার করতে পারেনি, অর্থাৎ সরকার তৈরি করতে পারেনি, উল্টে শোচনীয়ভাবে হেরেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব নিশ্চয় দলের সর্বস্তরে পড়বে। কিন্তু এটা খুব দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

তাছাড়া আর একটা কথা খেয়াল রাখা দরকার। তা হল, আমাদের দৃষ্টিকে বিজেপির নির্বাচনী কার্যকলাপের বাইরেও প্রসারিত করতে হবে যা আমাদের চোখের আড়ালে থেকে যায়। আমাদের চোখের আড়ালে গোটা রাজ্যব্যাপী বিজেপি এবং আরএসএস নিরন্তর তাদের হিন্দুত্বের আদর্শ প্রচারের কাজ করে নানা সংগঠন, সেবামূলক সংগঠন ও স্কুলের মাধ্যমে। বামফ্রণ্টের জামানায় আরএসএস ও বিজেপি এ রাজ্যে দাঁত ফোটাতে না পারলেও তৃণমূল কংগ্রেসের শাসনে তাদের জনসমর্থন, সংগঠন ও শক্তি বৃদ্ধিলাভ করেছে ঝড়ের গতিতে। ২০১১-র বিধানসভা ভোট থেকে ২০১৯-র লোকসভা ভোট পর্যন্ত মাত্র আট বছরে বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৩৬.৫% (৪০.৬৪%-০৪.১%)। প্রতিটি নির্বাচনে বিজেপির এই যে ব্যাপক জনসমর্থন বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে তারা একদিকে শহরে ও গ্রামাঞ্চলে বুথস্তর পর্যন্ত সংগঠনের বিস্তার ঘটিয়েছে, আর অন্যদিকে তৈরি করেছে আরএসএস পরিচালিত সঙ্ঘপরিবারের অসংখ্য নিজস্ব সংগঠন, আরএসএস পরিচালিত বহু স্কুল ও সেবামূলক সংগঠনও। এসব সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও স্কুলের মাধ্যমেই তারা আমাদের চোখের আড়ালে নিরন্তর হিন্দুত্ববাদের আদর্শ প্রচারের কাজ চালিয়ে যায়। এবার ভোটে বিজেপি হারলেও তাদের ভোট কমেছে অল্পই।

এটা ভাবার অবকাশ নেই যে ভোটে হেরে গিয়েছে বলে বিজেপি হাত গুটিয়ে পালিয়ে যাবে। সাময়িক হতাশা কাটিয়ে তারা আবার নিশ্চয়ই নতুন উদ্যমে বাংলা দখলের জন্যে ঝাঁপাবে। আর তখন আরএসএস পরিচালিত সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানগুলোও মসৃণভাবে চলতে শুরু করবে। তখন টের পাওয়া যাবে যে বিজেপি আপাতত পরাস্ত হয়েছে বটে কিন্তু হিন্দুত্ব প্রায় অক্ষতই রয়েছে। 

বাংলার রায়ে পশ্চিমবঙ্গে বহুদলীয় ব্যবস্থা বিপন্ন

একদিকে টিএমসি সরকারের নগ্ন মোল্লাতন্ত্র তোষণ নীতি এবং অন্যদিকে বিজেপির আগ্রাসী হিন্দুত্বের রাজনীতির মোকাবিলায় তাদের নরম হিন্দুত্বের রাজনীতি বিজেপি ও আরএসএসকে বাড়তে সাহায্য করেছে।  বিজেপি যেমন নগ্নভাবে ধর্মের নামে হিন্দুদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছে, তৃণমূল কংগ্রেসও তেমনি তার পাল্টা ধর্মের তাস খেলেছে মুসলিমদের সংগঠিত করার জন্যে। তারই ফলশ্রুতিতে হিন্দুদের ব্যাপক অংশ যেমন শুধু হিন্দু হিসেবেই বিজেপিকে ভোট দিয়েছে তেমনি মুসলিমরাও মুসলিম হিসেবেই ঢেলে ভোট দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসকে। তার ফলশ্রুতিতে কংগ্রেসের এবং বামেদের অনুগামী হিন্দু ও মুসলিমরা ব্যাপক হারে ছাপ মেরেছে যথাক্রমে পদ্মফুলে এবং ঘাসফুলে। এরই প্রতিফলন ঘটেছে নির্বাচনী ফলাফলে। আইএসএফ পেয়েছে মাত্র একটা আসন, বামফ্রণ্ট ও কংগ্রেস শূন্য। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ থেকে আপাতত হলেও বহুদলীয় সংসদীয় শাসনব্যবস্থা গেল অস্তাচলে, তার জায়গা নিল দ্বিদলীয় সংসদীয় শাসনব্যবস্থা। এটা যে গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার উপর একটা ভয়ংকর আঘাত তা বলা বাহুল্য। বিধানসভায় কংগ্রেস ও বামেদের প্রতিনিধির না থাকায় টিএমসি ও বিজেপি উভয়েই খুশি হয়েছে। খুশি বামবিরোধী মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমগুলিও। কারণ, তারা নির্বাচনী প্রচারাভিযানে টিএমসি ও বিজেপি ছাড়া কাউকে যেন খুঁজেই পায়নি। এভাবেই তারা বহুদলীয় সংসদীয় ব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত করেছে। তবে টিএমসির চেয়ে বেশি খুশি হয়েছে বিজেপি ও আরএসএস। কারণ তারা জানে যে তাদের হিন্দুত্বের  রাজনীতির সামনে প্রধান বাধা হল বামপন্থীরাই। একথা অস্বীকার করতে পারবে না বামপন্থীদের জাতশত্রুরাও। সুতরাং একথা অনস্বীকার্য যে এবার বাংলার রায়ে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলার গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা।

 বাংলার অন্ধকার দিকগুলো অন্ধকারেই থেকে গেল

তৃণমূল সুপ্রিমো বদলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সরকার তৈরি করেছিল। কিন্তু বিগত দশ বছরে সেই প্রতিশ্রুতি পালন করার কোনও প্রয়াসই চোখে পড়েনি। ফলে বাম জামানায় স্বচ্ছ ও ন্যায় প্রশাসন দেওয়ার ক্ষেত্রে যে অবক্ষয় শুরু হয়েছিল তার বৃত্তটা সম্পূর্ণ হয়েছে তৃণমূল জামানায়। প্রশাসনে দলতন্ত্র, দুর্নীতি, স্বজনপোষণ জাঁকিয়ে বসেছে। পুলিশ ও আমলারা পরিণত হয়েছে দলদাসে। তারা জনগণকে  নিরাপত্তা দেবে কি নিজেরাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ফলে দুর্নীতির জাল ও চক্র সর্বত্র ডালপালা ছড়িয়েছে। এরই পরিণতি হল নারদা কেলেঙ্কারি, সারদা কেলেঙ্কারি, আমফান কেলেঙ্কারি, গরু পাচার, কয়লা পাচার, বালি পাচার, কাটমানি, সিণ্ডিকেট রাজ ইত্যাদি দুর্গন্ধযুক্ত শব্দবন্ধগুলি শাসকদলের অঙ্গের ভূষণে পরিণত হয়েছে। 

দলতন্ত্র ও দুর্নীতির অভিঘাতে বিপর্যস্ত শিক্ষাব্যবস্থা। কার্যত বেহালাবস্থা স্বাস্থ্যব্যবস্থাতেও। এসব নিয়ে বিশদে বলার পরিসর নেই। যেটুকু বলতেই হয় তা হল, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল শিক্ষাকেন্দ্র রক্তাল্পতায় ভুগছে। হবেই তো, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ যে প্রায় বন্ধ। সামান্য যেটুকু নিয়োগের চেষ্টা হয়েছে তাতে স্বচ্ছতার লেশ মাত্র নেই। ফলে আদালতে কয়েকটি মেধা তালিকা ঝুলে রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে দালাল চক্র বাম জমানার চেয়েও বেশি জাঁকিয়ে বসেছে। জনগণ যেখানে বহুক্ষেত্রে বেডের অভাবে চিকিৎসা পাচ্ছে না কিছু স্বাস্থ্যকর্তা সেখানে কুকুরের ডায়ালিসিস করার দুঃসাহস দেখিয়েও পার পেয়ে যায়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে টিএমসি সরকারের কিছু ইতিবাচক কাজ নিশ্চয় আছে, কিন্তু দুর্নীতি ও দলতন্ত্রের দাপটে সেগুলো ঢাকা পড়ে গিয়েছে।

এ রাজ্যে পশু কেনাবেচার মতন মানুষ কেনাবেচার ব্যবসা চলছে। বিধায়ক/সাংসদরা অবলীলায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে জেলা পরিষদ ও পৌরসভার আস্ত বোর্ডটাই। কিনছে শাসকদল, বিক্রি হচ্ছে বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিরা। বিধানসভা ভোটের আগে বিধায়ক/সাংসদ কেনার বাজারে টিএমসিকে টেক্কা দিয়েছে তার চেয়েও বড় সওদাগর, বিজেপি। আগেও বিধায়ক/সাংসদরা দল বদলাত। তবে দল বদলালে বিধায়ক/সাংসদ পদ থেকে পদত্যাগ করত। এই নৈতিকতাটুকুও এখন আর নেই। যে জনপ্রতিনিধিরা তাদের বিক্রি করে তারা একদিকে বিশ্বাসঘাতকতা করে জনগণের সঙ্গে, আর অন্যদিকে করে যে দলের টিকিটে নির্বাচিত হয়েছিল সেই দলের সঙ্গে। জনপ্রতিনিধি কেনাবেচার এই জঘন্য কুসংস্কৃতি বাংলাকে কলঙ্কিত করেছে যার স্রষ্টা টিএমসি।   

তৃণমূল জামানায় সবচেয়ে বেশি শোচনীয় অবস্থা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে। সরকারি/আধা সরকারি অফিসে শূন্য পদে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রায় বন্ধ। এদিকে বন্ধ হয়েছে বিগত দশ বছরে বহু কলকারখানা,  শিল্পক্ষেত্রেও বিনিয়োগ নেই। ফলে কাজের সন্ধানে অন্য রাজ্যে ছুটছে বাংলার শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা, ছুটছে অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা। বাংলার যুব সমাজের ভবিষ্যত ক্রমশ অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে।   

উপরে আলোচিত গুরুতর অভিযোগ ও সমস্যাগুলি বাংলার জ্বলন্ত সমস্যা। কিন্তু বাংলার মানুষ সেগুলি পেছনে ঠেলে দিয়ে বেছে নিল দু’টি শ্লোগান – ‘ফ্যাসিবাদী বিজেপিকে আটকাও’ আর ‘মুসলিম তোষণকারী দিদিকে পাল্টাও’। ব্যাস, মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল – ৪৮% মানুষ ভোট দিল বিজেপিকে আটকাতে, আর ৩৯% মানুষ ভোট দিল দিদিকে পাল্টাতে। ফলে বিজেপি আটকে গেল আর টিএমসি আবার নবান্নের দখল নিল।

প্রশ্ন হল তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে বাংলা কতটা সুরক্ষিত

বিজেপির ক্ষমতায় যাওয়া আটকে দেওয়াটা কিন্তু আসল কথা নয়, আসল কথা হল বিজেপির হাত থেকে বাংলাকে রক্ষা করা। টিএমসি সরকার কি সেটা পারবে? কেউ ভাবতে পারে নিশ্চয় পারবে, তারা যখন বিজেপিকে হারাতে পেরেছে তখন বিজেপিকে বাংলা থেকে তাড়াতেও পারবে। এতটা ভরসা আমরা পাই না। কারণ, প্রথমত বাংলার জনগণের কাছে বিজেপি হেরেছে, টিএমসির কাছে নয়। বিজেপির বাড় বাড়ন্ত তো টিএমসি আমলেই। ২০১১ সালে টিএমসি যখন রাজ্যে সরকারে আসে তখন এ রাজ্যে বিজেপির বিধায়ক ও সাংসদ ছিল না। এখন তাদের ঝুলিতে ১৮ জন সাংসদ এবং ৭৫ জন বিধায়ক (দু’জন পদত্যাগ করায়)। অর্থাৎ বিগত দশ বছরে এটা প্রমাণিত যে টিএমসি সরকার বিজেপির মোকাবিলা করতে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে। সুতরাং এই সরকার আমাদের বাংলাকে আগামী দিনে হিন্দুত্বের বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবে এমন ভরসা হয় না। 

এরপর প্রশ্ন রয়েছে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি, গরু ও কয়লা পাচার, সিণ্ডিকেট রাজ – এগুলির হাত থেকে কি বাংলা বেরিয়ে আসতে পারবে ? শিল্পক্ষত্রে বন্ধ্যাদশা, শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য, হাসপাতালের বেহাল অবস্থা, সীমাহীন বেকারত্ব প্রভৃতি ইস্যুগুলির কী হবে ? যারা নারদা-সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত এবং শিক্ষায়-স্বাস্থ্যে-শিল্পে-বাণিজ্যে চূড়ান্ত ব্যর্থ তারাই তো পুনরায় মন্ত্রীসভা আলোকিত করছে। তাই এমন ভরসা হয় না যে নতুন সরকার বাংলা যে তিমিরে ছিল সেখান থেকে টেনে তুলতে পারবে।   

সুতরাং বাংলার জনগণ এবার ভোটে আসলেই কতটা সুচিন্তিত রায় দিয়েছে সে প্রশ্ন কিন্তু রয়েই গেল। এর সঠিক উত্তর লুকিয়ে আছে অনাগত ভবিষ্যতের গর্ভে। সেটা জানার জন্যে আমাদের এখন অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।