সোমবার (১৭ মে) সকালে সিবিআই নারদ কাণ্ডে রাজ্যের চার হেভিওয়েট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে গ্রেফতার করার পর থেকে সমস্ত সংবাদমাধ্যমের নজর এখন সেদিকে। সাধারণ মানুষের কাছে চর্চার বিষয়ও এখন এই রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়টি। প্রতি মুহূর্তের আপডেট চাইছেন তাঁরা। অথচ তার একদিন আগেই অর্থাৎ ১৬ মে, রবিবার থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছে কার্যত লকডাউন। দেশ জুড়ে করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ানক থেকে ভয়ানকতর হয়ে উঠছে। প্রতিদিন নতুন সংক্রমণের সংখ্যা লাফ দিয়ে যেমন বাড়ছে তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও। সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা যা সামনে আসছে বাস্তবে সংখ্যাটা তার চেয়ে অনেকগুণ বেশি। কারণ, করোনা সংক্রমণ যাদের দেহে হচ্ছে তাদের একটা ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ মাত্র করোনা পরীক্ষা করাচ্ছে। এর প্রধান কারণ হল, করোনা পরীক্ষা কেন্দ্রের লজ্জাজনক অপ্রতুলতা ও সচেতনতার অভাব। তাছাড়া সিগম্যাটাইজড হয়ে যাওয়ার ভয়ও কাজ করে, জানাজানি হয়ে গেলে সামাজিক বয়কটের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে যা গোটা পরিবারকে অনাহারের দিকে ঠেলে দেবে! হাসপাতালে বেড নেই, বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য নেই, ফলে করোনা রোগীরা ঘরেই যে যার সাধ্য মতন চিকিৎসা করাচ্ছেন, গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ মানুষই সেই সুযোগটুকুও নিতে পারেন না। ফলে বাড়িতেই বহু করোনা রুগীর মৃত্যু হচ্ছে যে খবর সরকার রাখে না। গোটা দেশের সঙ্গে আমাদের রাজ্যেও করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ঙ্কর থেকে ভয়ঙ্করতর হয়ে উঠছে। দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই রেকর্ড ভাঙছে আর নতুন রেকর্ড গড়ছে। দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা কয়েকদিন থেকেই চার হাজারের গণ্ডী টপকাচ্ছে, আর মৃত্যুর সংখ্যা একশোর উপরেই থাকছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার করোনা মোকাবিলায় ১৫ দিনের জন্যে (১৬ই মে থেকে ৩০শে মে পর্যন্ত) কিছু কঠোর অনুশাসন ও বিধিনিষেধ জারি করল যাকে কার্যত লকডাউন বলা হচ্ছে।

আংশিক হোক আর পূর্ণ লকডাউনই হোক কাজ হারাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ, যাদের অধিকাংশই দিন আনি দিন খাওয়া মানুষ। তাদের শুধু বিনামূল্যে চাল, গম দিলেই হবে না। এই মানুষগুলোর হাতে নগদ টাকাও দিতে হবে। আর এর জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে চলবে না বা এর দায় কেন্দ্রীয় সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কেন্দ্রীয় সরকার যদি এগিয়ে না আসে তবে যেখান থেকেই হোক রাজ্য সরকারকেই টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। রাজ্য সরকার বিগত দশ বছর ধরে অহেতুক ক্লাবের পেছনে, মাটি উৎসবে, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত বিজ্ঞাপন বাবদ এবং আরও অনেক ফালতু কাজে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ব্যয় করে ঋণের বোঝা বাড়িয়েছে। এবার মানুষের জীবন বাঁচাতে দরকার হলে সরকারকে ঋণ করেও টাকার ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিস্থিতি যা তাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প নেই

চিকিৎসকমণ্ডলী এতে খুশি নন, তাঁরা চান পূর্ণ লকডাউন। পরিস্থিতি এতই সঙ্গিন হয়ে উঠেছে যে জনগণের জন্যে মরাকান্না করা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও না পারছে চিকিৎসকদের মতামতের বিরুদ্ধাচারণ করতে, না পারছে সরকারের গৃহীত কড়া পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে। আমি গ্রামের মানুষ, আমার বাস প্রান্তিক ও নিম্নবিত্ত মানুষজনের মধ্যে। আমি জানি আংশিক লকডাউন হোক আর পূর্ণ লকডাউনই হোক, তাতে এই সব মানুষরা কাজ হারিয়ে কতটা বিপদে পড়বে। সেজন্যেই চিকিৎসক বন্ধুদের অভিমত অত্যন্ত বাস্তব বুঝেও তাঁদের অভিমতকে সমর্থন দিতে পারা যাচ্ছে না। আবার পূর্ণ লকডাউন না চাইলেও সরকার যে আংশিক লকডাউন জারি করেছে যা কার্যত পূর্ণ লকডাউন হলেও তার বিরোধিতা করতে পারছি না। কারণ, করোনার ভয়াল করাল গ্রাস থেকে দেশ ও মানুষকে বাঁচাতে এরূপ কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া অন্য বিকল্প নেই।   

তাই সরকারের জারি করা আংশিক লকডাউন যা পূর্ণ লকডাউনের প্রায় সমতুল্য তাকে সমর্থন জানিয়ে সরকারের উদেশ্যে কিছু প্রশ্ন ও দাবি রাখতে চাই। 

সরকার ঘোষিত অত্যাবশ্যকীয় কর্মক্ষেত্র ও দ্রব্যের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন

অত্যাবশ্যকীয় কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে রাত্রিবেলায় রাস্তায় চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন সব দোকান ও প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্ধের তালিকায় যে সব দোকানপাট ও প্রতিষ্ঠান রাখা রয়েছে সেগুলি বন্ধ রাখা নিশ্চয়ই জরুরি ছিল। অন্যদিকে অত্যাবশ্যকীয় কিছু ক্ষেত্রকে আংশিক বা সম্পূর্ণ ছাড় দেওয়া অত্যন্ত জরুরি ছিল। সরকার সেটা করেছেও। এ রকম ছাড় দেওয়া নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে অন্যত্র। যেমন প্রশ্ন রয়েছে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের তালিকা এবং ছাড় দেওয়ার সময়ের ব্যাপ্তি নিয়ে।    

অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের তালিকায় রয়েছে এমন কয়েকটি দ্রব্যের দোকান যা অনেককেই অবাক করেছে। সেগুলি হল মিষ্টি, শাড়ি ও গয়নার দোকান। মিষ্টির দোকান খোলা থাকবে সাত ঘণ্টা (সকাল দশটা থেকে পাঁচটা) এবং গয়না ও শাড়ীর দোকান তিন ঘণ্টা (দুপুর বারোটা থেকে তিনটা)। মিষ্টি বা মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য, শাড়ি ও গয়না কি অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্য? না, হ্যাঁ বলা যাচ্ছে না। কোন মাপকাঠিতে, কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে, কার বুদ্ধিতে এগুলোকে অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বোধগম্য হচ্ছে না। গতবছর পূর্ণ লকডাউনের সময় দেশ জুড়ে গোয়ালা বন্ধুরা এবং দুধ ব্যবসায়ীরা প্রবল বিক্ষোভ দেখিয়েছিল। বহু জায়গায় তারা বড়ো বড়ো দুধপাত্র রাস্তায় উল্টে দিয়ে প্রচুর দুধ নষ্ট করে লকডাউনের প্রতিবাদ করেছিল। তাদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনে সরকার মাথা নত করে আংশিক সময়ের জন্যে মিষ্টির দোকান খোলার অনুমতি প্রদান করেছিল। আমার মনে হয় সেজন্যেই এবারও মিষ্টির দোকানকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকলে গোয়ালা, দুধ ব্যবসায়ী ও মিষ্টান্ন বিক্রেতাদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হবে এটা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ নেই। কিন্তু দুগ্ধজাত শিল্পের সঙ্গে যত মানুষ যুক্ত তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি শ্রমজীবী মানুষ যুক্ত রয়েছে অন্য অনেক ক্ষেত্রে ও ব্যবসায়। রেল, বাস, নৌকা, লঞ্চ, স্টীমার ইত্যাদি পরিবহণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লক্ষ লক্ষ সংগঠিত ও অসংগঠিত মানুষ। চটশিল্পে ৩০% শতাংশ ও চা শিল্পে ৫০% লোক কাজ করতে পারবে। ফলে এই দুটি শিল্পে কাজ হারাবে বহু লক্ষ শ্রমিক। এ ছাড়া রয়েছে আরও অনেক ব্যবসা ও শিল্প যেখানে লকডাউনে অসংখ্য মানুষ কাজ হারাবে। দুগ্ধজাত শিল্পের শ্রমজীবী ও ব্যবসায়ীদের কথা ভাবলে তো ভাবতে হয় অন্যদের কথাও। আর তাহলে তো লকডাউন (আংশিক বা পূর্ণ) করাই যাবে না।

প্রশ্ন আছে ছাড় দেওয়ার সময়সীমা নিয়েও। চশমার দোকানকে সম্পূর্ণ ছাড় দেওয়া হয়েছে। ডাক্তারখানা ও ওষুধের দোকানের সমগোত্রীয় হতে পারে না চশমার দোকান। চশমার দোকানকে আংশিক সময়ের জন্যে ছাড় দিলেও মানুষের খুব বেশি অসুবিধা হত না। মিষ্টির দোকানকে যেখানে ছাড় দেওয়াই ঠিক হয়নি সেখানে সেগুলি সাত ঘণ্টা খুলে রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অথচ মুদিখানার দোকান ও বাজার হাট খুলে রাখার জন্যে সময় দেওয়া হয়েছে সারাদিনে মাত্র তিন ঘণ্টা – সকাল সাতটা থেকে দশটা। এই তিন ঘণ্টা সময় খুবই কম। এর ফলে মুদিখানার দোকানে ও বাজার-হাটে ভিড় অনেক বেশি হবে, যার ফলে দূরত্ববিধি মানা শিকেয় উঠবে।

কয়েকটি দাবি সরকারের কাছে

রেশন দোকান খোলা থাকবে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সপ্তাহে ছ’দিন। মানুষের সচেতনতার অভাব এবং তীব্র দারিদ্রতা হেতু সপ্তাহের প্রথম দু/তিন দিনেই মানুষ রেশনের দোকানে ভিড় করে, যেখানে দূরত্ববিধি মেনে চলা অসম্ভব হয়ে ওঠে। প্রশাসনও এক্ষেত্রে থাকে সম্পূর্ণ উদাসীন ও নিষ্ক্রিয়। ফলে লকডাউনের (তা আংশিক হোক কিংবা পূর্ণই হোক) উদ্দেশ্য অনেকটাই ব্যর্থ হয়ে যায়। রেশনের দোকান তাই সপ্তাহে ছ’দিন দিনভোর খোলা রাখলেই হবে না। সেখানে দূরত্ববিধি কার্যকর করার জন্যে সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এক্ষেত্রে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে সরকারকে ভোটের আগে দেওয়া দুয়ারে দুয়ারে রেশন পৌঁছে দেবার প্রতিশ্রুতি। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার এটাই তো উপযুক্ত সময়। সরকারকে সেই প্রতিশ্রুতি কার্যকর করার জন্যে এখনই উদ্যোগী হবার দাবি জানাচ্ছি। এটা একটু সময় লাগবে। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে রেশন দোকানে ভিড় পাতলা করতে সরকারকে এখনই দুটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, সরকারকে রেশন ডিলারদের নির্দেশ দিতে হবে রেশন গ্রহীতাদের ছ’টা তালিকা করে কাদের কবে রেশন হবে তা জানিয়ে দিতে। দ্বিতীয়ত, রেশনের দোকানে দূরত্ববিধি কার্যকর করার জন্যে প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিতে হবে। ৩০শে মে আংশিক লকডাউনের মেয়াদ শেষ হলে, যদি হয়ও, করোনার আরও অনেক বেশি শক্তিশালী তৃতীয় প্রজাতি প্রস্তুত হচ্ছে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আমাদের ওপর আছড়ে পরার জন্যে। অর্থাৎ করোনা সৃষ্ট অতিমারি থেকে অন্তত ২০২১ সালে রেহাই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এ কথাটা মনে রেখে রেশন দোকানের ভিড় পাতলা করার জন্যে আর একটি কাজ করতে হবে। তৃতীয় সেই কাজটি হল খুব শীঘ্রই রেশনের দোকানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।

আংশিক হোক আর পূর্ণ লকডাউনই হোক কাজ হারাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ যাদের অধিকাংশই দিন আনি দিন খাওয়া মানুষ। তাদের শুধু বিনামূল্যে চাল, গম দিলেই হবে না। এই মানুষগুলোর হাতে নগদ টাকাও দিতে হবে। আর এর জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে চলবে না বা এর দায় কেন্দ্রীয় সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কেন্দ্রীয় সরকার যদি এগিয়ে না আসে তবে যেখান থেকেই হোক রাজ্য সরকারকেই টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। রাজ্য সরকার বিগত দশ বছর ধরে অহেতুক ক্লাবের পেছনে, মাটি উৎসবে, মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত বিজ্ঞাপন বাবদ এবং আরও অনেক ফালতু কাজে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ব্যয় করে ঋণের বোঝা বাড়িয়েছে। এবার মানুষের জীবন বাঁচাতে দরকার হলে সরকারকে ঋণ করেও টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারকে আর একটা কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। সদ্য সমাপ্ত বিধানসভা ভোটে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রত্যেকটি গরীব পরিবারের গৃহকর্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্টে টাকা (কাউকে ৫০০ টাকা, কাউকে ১০০০ টাকা) দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীকে এই সময়েই সেই প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে।                  

আরও দু’টি দাবি আছে রাজ্য সরকারের কাছে। গত বছর দেশ জুড়ে পূর্ণ লকডাউন চলাকালীন প্রথম দিকে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা ছিল খুবই প্রশংসনীয়। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে জনগণের একটা সাধারণ প্রবণতা ছিল লকডাউনকে উপেক্ষা করা। সে সময় লকডাউন সফল ও সার্থক করতে পুলিশকে ভীষণ তৎপর ও সক্রিয় দেখা গিয়েছিল। অবশ্য কিছু পুলিশকে কোথাও কোথাও একটু বাড়াবাড়ি করতেও দেখাও গিয়েছিল। তারজন্য সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত পুলিশকর্মীকে ডেকে প্রশাসনের অভ্যন্তরে কড়া ভাষায় সতর্ক করলেই কাজ হত বলে মনে হয়। কিন্তু অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল যার খবর জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপরেই দেখা যায় পুলিশকে প্রায় দর্শকের ভূমিকায়, লকডাউন সফল করতে পুলিশের মধ্যে আগ্রহ ও উৎসাহ অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছিল। তাই সরকার ও প্রশাসনের কাছে সবিনয়ে বলতে চাই যে, তাঁরা যেন বিশেষভাবে সতর্ক থাকেন যাতে গতবারের পুনরাবৃত্তি এবার না হয়।    

সব শেষে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে বিষয়ে সেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও দরকারী। সর্বগ্রাসী করোনা ভাইরাসের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে একান্ত প্রয়োজন হল ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। সকল রাজনৈতিক দল, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তিবিশেষ যার যা শক্তি ও সামর্থ্য আছে সবাইকে একজোট হয়ে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে করোনাকে হারানোর লড়াইয়ে সামিল হতে হবে, ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। করোনা অতিমারির বিরুদ্ধে সবাই মিলে জোট বেঁধে সার্বিক শক্তির সমাবেশ ঘটিয়ে লড়তে না পারলে করোনাকে হারানো যাবে না। আর এটা সবচেয়ে আগে, সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করা দরকার সরকারের। প্রধানত সরকারকেই উদ্যোগী হতে হবে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে করোনার বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব কঠিন লড়াইয়ে সামিল করার। এ প্রসঙ্গে বিনম্রতার সাথে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে সবাইকে নিয়ে করোনা-যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে গত বছরের আমাদের অভিজ্ঞতা মোটেই আশাপ্রদ ও সুখকর ছিল না। এবারে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই আরও কঠিন। তাই আশা করব যে, সরকার এবার বিরোধী-দল সহ অন্যান্য সকল শক্তি ও সংগঠনকে পাশে নিয়ে করোনা-যুদ্ধ পরিচালনা করবে।