পশ্চিমবঙ্গে বহিরাগত কেন্দ্রীয় পুলিশ আসায় এখানে নতুনভাবে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে, এমন একটা  ভ্রান্ত ধারণা সুকৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী সুপ্রশিক্ষিত, স্থানীয় পুলিশ কর্মীদের মাস্ক ছাড়া দেখা গেলেও, কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাউকে মাস্ক ছাড়া দেখা যায় না। কোভিড বিধি মানার ব্যাপারেও তারা প্রশিক্ষিত। এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সবাই টিকা নিয়েছেন, তাদের মাধ্যমে কোভিড ছড়াচ্ছে, একটা বিকৃত ভাবনার প্রকাশ। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দোষারোপ করা অন্যায়।

একইভাবে কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী যারা প্রচারে আসছেন, তারা কোভিড বিধি মেনেই আসছেন। তবে ভোটের প্রচার, মিটিং-মিছিল করোনার সংক্রমণ যে বাড়ায়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না, এতে সবাই দুষ্ট, বিকল্প কিছু নেই।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভারতের সর্বত্র। ভোট তো কেবল পাঁচ রাজ্যে- পশ্চিমবঙ্গ, অসম, কেরল, পুডুচেরী, তামিলনাড়ু- তে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মহারাষ্ট্রে আসে ফেব্রুয়ারির প্রথমে, তারপর সর্বত্রই। মহারাষ্ট্র থেকে যারা অন্য রাজ্যে গেছেন, তাদের অবতরণ ক্ষেত্রে কঠোর স্বাস্থ্য বিধি মানা দরকার ছিল।  স্বাস্থ্য রাজ্যের আওতায়, তারা অনেক ক্ষেত্রেই এবিষয়ে নীরব ছিল, তাই যা হবার তাই হয়েছে, এখন ব্যর্থতা ঢাকতে দোষারোপ, এটাই রাজনীতিবিদদের পুরনো অসুখ।

চিত্র ২, ৩ এবং ৪’এ বিভিন্ন রাজ্যে সক্রিয় কোভিড-এর অগ্রগতি দেখালাম। শুধু ভোট রাজ্যে নয়, সর্বত্রই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ লক্ষণীয়। শুরু প্রায় একই সময়ে। যেখানে ভোট হচ্ছে না, কেন্দ্রীয় বাহিনীও নেই, সেখানে দ্বিতীয় ঢেউ কে আনল, তার ব্যাখ্যা শুনতে চাই। 

এখন বলা হচ্ছে , কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গকে তার প্রাপ্য টিকা সরবরাহ করছে না । এখনও পর্যন্ত সব চেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে বিরোধী মহাজোট শাসিত মহারাষ্ট্রে (১ কোটি ১০ লক্ষ প্রথম ডোজ) তারপর কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে (৯৫ লক্ষ )।  বাংলার স্থান পঞ্চম, ৭৬ লক্ষ প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে । টেবিল ২ তে টিকার রাজ্যভিত্তিক সব তথ্য দেওয়া আছে। প্রথম দিকে বাংলায় যা টিকা পাঠানো হয়েছিল, তার সম্পূর্ণ ব্যবহার না হওয়ায় বাংলা কিছুটা পিছিয়ে। কেন্দ্রকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ১ মে থেকে রাজ্য টিকা কিনে নিজেরাই দিতে পারবে, ১৮ এর ওপর বয়সী সবাই টিকা নেবার যোগ্য হবে। আশা করি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আটকানো যাবে। কিন্তু আমাদের মুখ্যমন্ত্রী তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তাতেও সমস্যা। এতদিন তিনি বলে আসছিলেন রাজ্যকে কেন করোনার টিকা কিনতে দেওয়া হচ্ছে না। সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক সংগঠিত হয় দিল্লিতে। তারপরই কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নেয় এবার থেকে রাজ্য এবং কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলি সরাসরি করোনার টিকা উৎপাদনকারক সংস্থাগুলি থেকে টিকা কিনতে পারবেন। মঙ্গলবার থেকেই মমতা আবার নতুন কিছু অভিযোগ খাড়া করতে শুরু করেছেন। তিনি বলছেন, ‘গত ২৪ তারিখে আমি একটা চিঠি দিয়েছিলাম কেন্দ্রকে। অনুরোধ করেছিলাম, যাতে রাজ্য সরাসরি টিকা কিনে মানুষকে দিতে পারে তার জন্য হস্তক্ষেপ করতে। কিন্তু সেই চিঠির কোনও উত্তর পাইনি’। তিনি আরও বলছেন, ‘বিপদের সময় দায় এড়াচ্ছে কেন্দ্র। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে টিকা দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দেরিতে’।

আসলে মমতা দেবী বরাবরই ঘোলা জলে মাছ ধরতে বেশি পছন্দ করেন। সেখানে তিনি কোনও যুক্তি, তথ্যের ধার ধারেন না। যাই হোক, তিনি চাইছেন করোনাকে ইস্যু করে বাকি তিনদফা ভোটে কাজে লাগাতে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন গোটা দেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও আছড়ে পড়েছে, তখন মমতা দেবী আর দেরি করলেন না, কেন্দ্রকে আক্রমণের হাতিয়ার হিসেবে করোনাকে ব্যবহার করতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। বর্তমান এই জটিল পরিস্থিতিতে মানুষকে বিভ্রান্ত করে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছেন। কিন্তু বিধি বাম, সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রের নতুন ঘোষণার (১৮ বয়স হলেই সকলে ১ মে থেকে টিকা নিতে পারবে, রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলি সরসরি টিকা কিনতে পারবে, খোলাবাজারেও মিলবে টিকা ইত্যাদি) পর তাঁর পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। তাই পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনি নতুন করে অভিযোগের তত্ত্ব সাজাতে শুরু করেছেন।

টেবিল ১: ভারতে কোভিড পরিস্থিতি , ১৯ এপ্রিল ২০২১

টেবিল ২: কোভিড টিকাকরণের  সমষ্টিগত সুবিধাভোগী, ১৯শে এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত