অতিমারির কবলে সমগ্র বিশ্ব। ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ অপেক্ষা করছে ভ্যাকসিনের জন্য। ভ্যাকসিন এলেও সব সমস্যা থেকে মুক্তি এত সহজে ঘটবে কি না তা নিয়েও বিতর্ক আছে। প্রতি মুহূর্তে নতুন আপডেট, নতুন খবর চলে আসছে। আক্রান্তের হার, মৃত্যুর হার বাড়ছে। মানুষ চূড়ান্ত বিহ্বল। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভ্যাকসিনের সাফল্য নিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। ভারতেও চলছে ‘কোভ্যাকসিন’ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা। দাবি করা হচ্ছে যে প্রি-ট্রায়ালে সেটি উত্তীর্ণ হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। দিল্লির এইমসে সোমবার (২০জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে ‘হিউম্যান ট্রায়াল’।

অভিনেত্রী ও পরিচালক চূর্ণী গাঙ্গুলি চেয়েছেন এই হিউম্যান ট্রায়ালে অংশ নিতে। কিছুদিন আগেও তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ইচ্ছের কথা প্রকাশ করেছিলেন। সরাসরি এইমসকে চিঠি দিয়ে তিনি তার ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষকে। কর্তৃপক্ষ মঞ্জুর করেন কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়। সংস্কৃতি জগতের তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি এমন ইচ্ছা প্রকাশ করলেন এই দেশে। ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ অবদানের জন্য সমগ্র বিশ্ব এইসব পেশায় নিযুক্ত মানুষকে কুর্নিশ জানিয়েছে সর্বান্তকরণে। এই কঠিন সময়ে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত পরিচালক চূর্ণী গাঙ্গুলির মানবকল্যাণের স্বার্থে এমন সদিচ্ছা সত্যিই দৃষ্টান্তমূলক। তাঁর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন তাঁর স্বামী পরিচালক ও অভিনেতা কৌশিক গাঙ্গুলি। খবরটি প্রকাশ্যে আশার পর টলিউডের অনেকেই চূর্ণীর ইচ্ছার প্রতি সম্মান ব্যক্ত করেছেন এবং অনেকে পরিচালক-অভিনেত্রীর পথ ধরেই কোভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসবক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

নিয়মমাফিক হিউম্যানট্রায়ালে অংশ নিতে হলে অংশগ্রহণকারীর বয়স ১৮ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে হতে হবে এবং শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে হবে। যাঁরা অংশ নিতে চান এই ট্রায়ালে তাদের সবার আগে বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। দিল্লি এইমসের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কে রাই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য তাঁদের ১০০ জন স্বচ্ছাসেবকের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু ১৮,০০ জন স্বেচ্ছাসেবক এই পরীক্ষার জন্য নাম নথিভুক্ত করেছিলেন। তিনি বলেন, নাম নথিভুক্ত করার জন্য তাঁরা এত মানুষের ফোন পাচ্ছিলেন যে একরকম বাধ্য হয়েই ফোন ধরা বন্ধ করে দেন। কেবলমাত্র যারা হোয়াটস অ্যাপ এবং ইমেলের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন তাদেরই নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, মানুষের এই স্বতস্ফুর্তভাবে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের বিষয়টি তাদের উৎসাহিত করেছে।

তবে যে প্রতিষ্ঠানগুলোয় এই হিউম্যান ট্রায়াল চলছে সেই এলাকার থেকেই স্বেচ্ছাসেবকদের নির্বাচন করা হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে ড. রাই বলেন, হিউম্যান ট্রায়াল শুরু হওয়ার পর থেকে নির্বাচিত স্বেচ্ছাসেবকদের শারীরিক অবস্থার উপর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ চালাতে হবে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য, ফলে যারা ভিন রাজ্য থেকে আসবেন তাঁদের পক্ষে এটা সমস্যার। তাই প্রতিষ্ঠানগুলি যে শহরে অবস্থিত সেখান থেকে বা আশপাশের অঞ্চল থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের নির্বাচিত করা হয়েছে। দিল্লি এইমস, পাটনা এইমস-সহ ১২টি  প্রতিষ্ঠানে কোভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালের কাজটি চলবে। প্রথম ধাপের পরীক্ষা সফল হলে দ্বিতীয় ধাপে স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা অনেকটা বাড়ানো হবে, তৃতীয় ধাপে আরও বাড়ানো হবে বলে এইমস সূত্রে জানা গিয়েছে।