আরব সাগরের নোনা জলে যখন পড়ন্ত সূর্যের নরম আদুরে আলো পড়ে তখন রোজ কবিতারা জন্ম নেয়। সাগরমুখী বারান্দায়, কেদারায় বসে কবি রোজ কল্পনা করেন যে ‘কোরা’ কাগজ ও ক্যানভাস কিভাবে ভরে উঠছে শব্দ-রঙে, কল্পনায়-ছন্দে। সেবার বর্ষায় সমুদ্রের মাথায় যখন ঘন কালো মেঘের ধার ঘেঁষে সূর্যের সাত রঙ সাতটা ঘোড়ার মতো ধেয়ে এল, যেন যুদ্ধ হবে আলোয় কালোয়, সেই মোহময় রূপ স্থান কাল সময়কে হারিয়ে দিয়ে ঘোর লাগিয়ে দিল কবিকে, তাঁর চেতনার রঙে ছড়িয়ে পড়ল মায়া, আগল খুলে বেরিয়ে আসতে চাইল কল্পনার খেয়া, পাল তুলে দিল শব্দরা… ।

কবি তুষার ধবল সিং চাইলেন এমন সূর্যাস্ত, এমন বিকেল, এমন সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মাতুক সকলে, তাঁর মুম্বাইয়ের বাসস্থানে প্রকান্ড বাতায়নের সামনে এমন এক কেদারা থাকুক যেখানে বসে কবি সৃষ্টি করবেন কবিতা, শিল্পীরা আঁকবেন ছবি। মেহগনি কাঠের সুন্দর চেয়ারের সঙ্গে ডেস্ক তৈরি হল আর তারপর কত কত যে কবিতারা পাখনা মেলল আর সাদা ক্যানভাস বদলে গেল তুলির টানে… । তুষার ভাবলেন, তাঁর ইচ্ছে ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে। দেশ বিদেশের কবিরা আসুক, মেতে উঠুক কবিতা উৎসবে। তুষার কলকাতা এলেন। সঙ্গে এল সেই চেয়ার। কাব্য-চর্চা ও ভাবনা বিনিময়ের স্থান কলকাতার থেকে আর বেশি ভালো আছে না কি! সেই ভাবনা থেকেই আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব কিংবা ‘চেয়ার পোয়েট্রি ইভনিংস’ –এর সূচনা। নভেম্বরের ২৩-২৫ কলকাতায় আসছেন ডাচ, আইরিশ, ফ্লেমিশ, ফরাসি, স্লোভেনিয়ান, হিন্দি, মালায়ম ভাষার কবিরা। সঙ্গে থাকবেন সুবোধ সরকার, বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়, তন্ময় চক্রবর্তী, উজ্জ্বল ভট্টাচার্যদের মতো বাঙালি কবিরাও। বিসমিল্লা করবেন কবি শঙ্খ ঘোষ রোটারি সদনে। কলকাতা হেরিটেজ বাংলো ও সাশা স্টুডিওতেও কবিতার আসর বসবে। আরব সাগরের তীরে যে ভাবনার শুরু তা শেষ হবে গঙ্গা বক্ষে।

এই কবিতা উৎসবের আয়োজকদের তরফে কবি শর্মিলা রায় বলেন- কলকতায় এই ধরনের আন্তর্জাতিক কবিতা উৎসব সম্ভবত প্রথম। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে কবিরা এই উৎসবে হাজির হবেন। তাঁরা কবিতা পাঠ করবেন, নিজেদের মধ্যে মত বিনিময় করবেন।