এবারের অতিমারি পরিস্থিতিতে নবম শ্রেণির প্রাপ্ত নম্বরের ৫০ শতাংশ এবং দশম শ্রেণির আভ্যন্তরীন মূল্যায়নের পাঁচগুণ যোগ করে মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। যে পরীক্ষায় ৭৯ জন প্রথম স্থান অধিকার করেছে এবং ৯০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং ১০০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরকেই ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সে ক্ষেত্রে কলা, বাণিজ্য বা বিজ্ঞান বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানদন্ডের বিভ্রান্তি ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যার মুখে ফেলবে। এছাড়া যে বিষয়টি মুখ্য হিসেবে দেখা দেবে তা হল, রাজ্যে বা রাজ্যের বাইরে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাপ্ত নম্বরের গ্রহণযোগ্যতা। জীবনের প্রথম বাহ্যিক মূল্যায়ন পরীক্ষায় সম্পূর্ণ আভ্যন্তরিন মূল্যায়নের ভিত্তি অনেক উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার রুদ্ধ করে দেবে।

বিগত কয়েক বছর সরলীকৃত মূল্যায়ন পদ্ধতি প্রাপ্ত নম্বরের হার বাড়িয়েছে যার ফলে উচ্চমাধ্যমিক, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে বাড়তি চাপ এসেছে। প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে শিক্ষার মানের সমানুপাতিক সম্পর্ক না থাকার কারণে উচ্চমেধার ছাত্র-ছাত্রীরা নম্বরের যাতাকলে ক্রমশ পিষ্ট হচ্ছে এবং মধ্যমেধার ছাত্র-ছাত্রীরা সামনের সারিতে চলে আসছে। অনেক ছাত্র-ছাত্রী যে নম্বর পাচ্ছে তা তাঁরা বহন করতে অসমর্থ। ফলে বিভাগ ও বিষয় চয়নে বিভ্রান্তি আসছে এবং উচ্চ শিক্ষার অঙ্গনে তারা সফলতা পাচ্ছে না। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে পাশের হার বাড়ানো কোনও রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের কারণ হতে পারে না। পঠন-পাঠনের মানোন্নয়ন, সঠিক মূল্যায়ন পদ্ধতি শিক্ষার মান উন্নয়নে সহায়ক হয়।

মাধ্যশিক্ষা পর্ষদ স্কুলের প্রাপ্ত নম্বরকে কেবলমাত্র সিলমোহর দিয়েছে। এই অতিমারি পরিস্থিতিতেও শিক্ষার মান বজায় রাখতে, ছাত্র-ছাত্রীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে অন্য বিকল্পের সন্ধান করতে পারত পর্ষদ। প্রথমত, মাল্টিপ্যাল চয়েস, সংক্ষিপ্ত উত্তরের মধ্যে দিয়ে অনলাইনে পরীক্ষা হতে পারত। উচ্চ শিক্ষা ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, তিনটি বা চারটিভাগে ছাত্র-ছাত্রীদের পরীক্ষা নেওয়া যেত। এবং সে ক্ষেত্রে প্রতি ভাগে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা আড়াই লক্ষের কাছাকাছি থাকত। যেমন করে এই অতিমারি পরিস্থিতিতেও জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়েছে।

এবার মাধ্যমিকে সেই অর্থে কোনও মেধা তালিকা প্রকাশ হবে না, কিন্তু সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বর অধিকারীর সংখ্যা ৭৯। ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিযোগীতার মানসিকতা তৈরির ক্ষেত্রটি বাধাপ্রাপ্ত হল। কয়েকবছর ধরে শোনা যাচ্ছিল মাধ্যমিক আসলে সাক্ষরতার পরীক্ষা। এবারের পরীক্ষা ব্যবস্থা ও ফলাফল তাকে সিলমোহর দিল। পর্ষদ যদি বাস্তবমুখী যুক্তিসম্মত পরীক্ষা ব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারত, তবে দিনের শেষে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গঠনের ভিত্তিকে নষ্ট করে ছাত্র-ছাত্রীদের এভাবে অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিত না।

মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েও বলব, তোমাদের প্রকৃত মূল্যায়ন হল না। আত্মতুষ্টিতে না ভুগে ভবিষ্যতের জন্য তৈরী হও।