মেয়েদের জীবনের কথা বলার অছিলায় তাদের নিরন্তর অপমান করে চলেছে বাংলা টিভি সিরিয়াল। যে জীবন এখানে দেখানো হয় সে জীবন বদ্ধ জলাশয়ের জীবন। কোনও পদ্ম ফোটে না সেখানে, মুক্ত হাওয়ারও পথ বন্ধ তাই তিরতিরে ঢেউও নেই, মাছরাঙার ডানায় সোনালি রোদের গান নেই, বর্ষায় কূল ছাপিয়ে যাওয়া নেই, এ জল বিষাক্ত, কোনও প্রাণ সঞ্চারিত হয় না এখানে। এমন মেয়ে-জীবনই অপরিবর্তনীয় এক সত্য বলে প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে এখনকার সিরিয়ালগুলো। অনেক অনেক মহিলা চরিত্র, তবে তারা যেন একে অপরের ক্লোন। এই প্রোটোটাইপই তো আসলে যেকোনও নির্মল জলাশয়কে এঁদো ডোবা করে তোলে আর এসব দেখে শুনে মানুষের শুভ-চিন্তন হারিয়ে যায়, সুকুমার প্রবৃত্তি লোপ পায়, সে ধীরে ধীরে এঁদো পুকুরের ঘরকুনো ব্যাঙ হয়ে যায়।
একটি মেয়ের মন জয় করা কি সহজ কাজ? কত যুগযুগান্তর ধরে কাব্য, নাটক আর গল্প রচিত হয়ে চলেছে নারী পুরুষের সম্পর্কের সমীকরণের জটিলতা এবং স্তরবিন্যাস নিয়ে, কারণ নারী-পুরুষের সম্পর্ক রহস্যময়, তাতে যেমন আছে অম্ল মধুর রসায়ন তেমনই আছে মুক্তির স্বাদ, আছে প্রেম এবং অপ্রেমের বর্ণময় বিচ্ছুরণ। সিরিয়ালে এক পুরুষ অনায়াসে পেয়ে যায় একাধিক সুন্দরী নারী। প্রায় সব কাহিনি বিন্যাসে চমক আনার জন্য নায়কের একাধিক প্রেম কিংবা বিবাহ দেখানো হয় এবং বিভিন্ন সময়ে সেইসব নারী চরিত্র গল্পের তোয়াক্কা না করে বদলা কিংবা করুণার দোহাই দিয়ে মূল গল্পে ঢুকে পড়ে অনাহুতের মতো। গল্পের গোরুকে তখন ঘাস বিচুলির সঙ্গে বিরিয়ানি, কোর্মা, কালিয়া খাওয়ানোর প্রচেষ্টা করা হয়, তার ফলে সুস্থ রুচির দর্শকদের বদহজম হয়, নিরাসক্তি জন্মায় অতিরিক্ত মশলাদার পরিবেশনে।
জীবন ছোটো হলেও তো খুব ছোটো নয়, আমাদের দৈনন্দিন যাপনের অভিজ্ঞতা বলে যে, সংসারে কিছু কলহ থাকে কিন্তু সেটাই সব নয়; নাহলে সংসার চলে কীভাবে? সংসার-যুদ্ধে কিছু অঘটন সাধারণ নিয়ম কিন্তু মানুষের মানিয়ে নেবার শক্তি খুব বেশি বলে সব ঝড়ঝাপ্টা সে সহ্য করতে পারে। যে গন্ডগোল বা ভুল বোঝাবুঝি হয় তা চিরস্থায়ী হয় না বাস্তবে কিন্তু সিরিয়ালে ঠিক এর উল্টোটা ঘটে, সমস্যার ঘনঘটা সেখানে রোজ। ষড়যন্ত্র, কুমতলব, হিংসা, ঝগড়া সেখানে নৈমিত্তিক ঘটনা। অনভিপ্রেত ঘটনার পুরো দায়িত্ব কি নারীর? সিরিয়ালে কুমন্ত্রণার হোতা নারী, মন্থরার ধারাবাহিকতা আজও চলছে অনায়াসে কিংবা লেডি ম্যাকবেথের মতো উচ্চাকাংক্ষী এক নারী সংসার তছনছ করে দিচ্ছে। এমন এক অবস্থায় প্লট নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে এক বাড়ির মধ্যে সবাই সবাইকে সন্দেহ করতে থাকে। অল্প বয়েসি মেয়েরাও সংসারের জটিলকুটিল অঙ্কের দোসর হয়ে যায়। নারীর অসহায় অবস্থা দেখাতে গিয়ে সিরিয়াল-নির্মাতারা তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দেখাতে ভয় পায় পাছে TRP কমে যায়। প্রায় সব ধারাবাহিকের গল্প একই গতে বাঁধা- যে বাঁধনে ভালোবাসার বন্ধন নেই, দমবন্ধ হয়ে যাওয়া আছে।
কোনও ব্যক্তিত্বময়ী নারীর চরিত্র গল্পের প্রয়োজনে সৃজন করা হয় তাহলে তাকে হয় বিবাহ-বিচ্ছিন্না আর নয়তো অবিবাহিতা দেখানো হয়। অর্থাৎ, যেন বিবাহিতা নারীরা সবাই একই রকম ব্যক্তিত্বহীন শাড়ি-গয়না-সিঁদুর-পরা এক পুঁটুলি বিশেষ, তারা হয় শ্বশুর বা শাশুড়ির দাপটে জড়সড়ো আর নয় তো জটিলা-কুটিলা-ষড়যন্ত্রকারী। চোখের জলে তারা সবকিছু জয় করতে চায়।
সিরিয়াল নির্দিষ্ট কিছু থিয়োরি মেনে চলে, বেশিরভাগ লিড্ চরিত্রের মেয়েদের ফর্সা হতেই হবে, আর কালো মেয়ে মানেই ভ্যাম্প বা ভিলেন আর নয়তো তারা গ্রামের মেয়ে যারা শহরের মেয়েদের কাছে হেয় হবে প্রতি মুহূর্তেই। কালো মেয়েদের সমাজ যেভাবে আগে দেখত সিরিয়াল-নির্মাণে সেই ফরমুলা মেনে চলা হয়। দর্শক যে ফর্সা মুখ দেখতে চায়, আলোকিত মন এমন যুক্তি মানতে না চাইলেও খবরের কাগজে পাত্র-পাত্রীর বিজ্ঞাপনে ফরসা, সুন্দরী শব্দগুলো তো এখনও চোখে পড়ে এবং এই শব্দগুলো যে মানসিকতার ফসল হয়তো বা সেই সব দর্শকের সংখ্যাই বেশি এবং তাদের তুষ্টির কথা ভেবেই এমন কাস্টিং করতে বাধ্য হয় পরিচালক-প্রযোজক। সিরিয়ালগুলোয়, নায়িকাদের জীবনে যতই অশান্তি থাক তাদের শাড়ি আর গয়না থাকে শাড়ির দোকানের ম্যানিকিনের মতো। নারীর ব্যক্তিত্ব মর্যাদা হারায়। যদিবা কোনও ব্যক্তিত্বময়ী নারীর চরিত্র গল্পের প্রয়োজনে সৃজন করা হয় তাহলে তাকে হয় বিবাহ-বিচ্ছিন্না আর নয়তো অবিবাহিতা দেখানো হয়। অর্থাৎ, যেন বিবাহিতা নারীরা সবাই একই রকম ব্যক্তিত্বহীন শাড়ি-গয়না-সিঁদুর-পরা এক পুঁটুলি বিশেষ, তারা হয় শ্বশুর বা শাশুড়ির দাপটে জড়সড়ো আর নয় তো জটিলা-কুটিলা-ষড়যন্ত্রকারী। চোখের জলে তারা সবকিছু জয় করতে চায়।বহু প্রাচীন অশ্রু অবশ্যম্ভাবী হয়ে দর্শকের হৃদয় বিগলিত করে। অন্যদিকে,পড়াশোনা, বুদ্ধিমত্তা, মনন, ব্যক্তিত্বের বদলে গয়না-শাড়ির গ্ল্যামার বাড়িয়ে চোখ ধাঁধিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। নারীকে দেবী, শক্তি বা মহৎ হিসেবে না দেখে শুধু যদি প্রকৃতি-স্বরুপা হিসেবে তাকে সম্মান করা যেত তাহলেও শুধু সাজ, গ্ল্যামার আর একরৈখিক নারী-চরিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে তাকে ছোটো করা হত না।
মুনাফা-মাতব্বররা সব কিছুর নির্ণায়ক হলে যেমনটা হয় তেমনি হয়ে চলেছে দিনের পর দিন এখনকার বাংলা সিরিয়ালে। বাস্তবের মাটিতে সর্বত্র নারীশক্তির উত্থান- লেখাপড়া, খেলাধূলা, বিজ্ঞানে, শিল্পে এমন কোনও শাখা নেই যেখানে নারীর বিজয়কেতন ওড়ে না। কিন্তু সিরিয়ালের অধিকাংশ নারীরাই কোন যুগে পড়ে আছে কে জানে! তাদের হাত থেকে সিঁদুর কৌটো পড়ে গেলে স্বামীর অকল্যাণ হয়, স্বামীর কল্যাণে তারা রাজপথে দন্ডি কাটে, সিঁদুর এবং শাঁখা-পলার দিব্যি করে তারা অন্যায়ের প্রতিশোধ নেয়। তন্ত্র-মন্ত্র, তুক-তাক, বশীকরণ, উদ্ভট অলৌকিকতা, মান্ধাতার আমলের কুসংস্কার, কুপ্রথা রোজ রোজ দেখানো হচ্ছে এমনভাবে যেন ঘরে ঘরে এমনটাই হয়ে থাকে। সিরিয়ালের ফর্মুলা অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতা যাদের কম তারাই ভালো হয়, সহজ-সরল হয়, শাড়ি ছাড়া আর অন্য কোনও পোশাক তারা পরে না আর, সেইসব নারীকে যারা নির্যাতন করে তারা শহুরে, শিক্ষায়-মানে বড়ো, সব রকম পোশাকে স্বচ্ছন্দ, কেউ কেউ সিগার- মদ খায়, পার্টি করে… এত সরলীকরণ দেখে যুক্তিবাদী দর্শকের বিবমিষা হয়। কিন্তু এমন যুক্তিবাদী দর্শককে পরোয়া করেন না নির্মাতারা। বাংলা টিভি সিরিয়ালে নারী চরিত্রের মুখে শোনা যায় না বাইরের পৃথিবীর কোনও বার্তা। একবিংশ শতাব্দীর মেয়েরা এত কূপমন্ডুক? সিরিয়াল নির্মাতারা মেয়েদের পোশাক এবং সংলাপে একটা বাঁধা মডেল অনুসরণ করে চলেছেন যা আধুনিকও নয়, পৌরাণিকও নয়, নিজেদের বানানো ঘেরাটোপের এক জগৎ, গিলিয়েও দিচ্ছেন দর্শকদের আর ভাবছেন, কি সাফল্য! কিন্তু একঘেয়েমিক্লিষ্ট বিনোদনেও মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে, যেমন, একসময় সিনেমা এবং নাটকে হয়েছিল। মানুষ নারীকে সঞ্চরমান জীবনপ্রবাহের অংশ হিসেবে দেখতে পেলে বেশি খুশি হবে। ‘পিরিয়ড-পিস’ দেখাবার সময় সমকালীন রীতি, আচার এবং কুৎসিত নিয়ম ও নিদান দেখাতে হবেই সেই সময়কে তুলে ধরার প্রয়োজনে কিন্তু তার আতিশয্য দেখিয়ে একধরনের দর্শককে প্রাচীন কুপ্রথাগুলোর প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন করে তোলার চেষ্টা করা হয়। নারীকে বন্দিনি দেখতে অনেকেরই ভাল লাগতে পারে কারণ তারাও সংকীর্ণ মনে পৃথিবীকে দেখতে অভ্যস্ত। তারা ‘রক্তকরবী’র নন্দিনীর ডাক শোনেনি। আমরা চেয়ে দেখছি আজকের নন্দিনীরা বিশ্বজয় করতে এগিয়ে চলেছে।
প্রশ্ন, তবুও মানুষ দেখছে কেন? ঘরে যখন কাজকর্ম থাকে না মানুষ ওইসব প্যাচপেচে ঘটনাগুলো দেখে সময় কাটিয়ে দেয়। ভাত না থাকলে মানুষ বুনো শেকরবাকড় খেয়েও জীবনধারণ করতে বাধ্যে হয়। নাটকের মতো উৎকৃষ্ট মানের শিল্প দেখার অভ্যেস তৈরি হয় না সবার, তাই যখন দেখি একটি অনবদ্য নাটকে হল ভর্তি হয় না আর বোকা-বাক্সের বস্তাপচা ব্যঞ্জন- থোড়-বড়ি-খাড়া খেয়ে যাচ্ছে মানুষ নিবিষ্ট চিত্তে কেবলমাত্র তা ঘরের মধ্যে কম খরচে আসছে বলে, মনঃকষ্ট হয়…। বাংলা নাটক ও সিনেমার উজ্জ্বলতায় আমরা আলোকিত হয়ে গৌরব বোধ করি অথচ সেই ভাষার সিরিয়ালে কি স্থূল সংলাপ, তাতে না থাকে বুদ্ধির দীপ্তি, না সামান্য প্রচ্ছন্নতা, যে উন্নতরুচির শিল্পের ঐতিহ্য মেনে সুরুচিকর বোধের প্রত্যাশা করে বাঙালি, তার ঘরে আজ ঢুকে পড়ছে খুব জোরালো অপসংস্কৃতির বান। কিন্তু অভিনয়-শিল্পীরা যথেষ্ট দক্ষ। তাদের দিয়ে অনেক ভালো কাজ হতে পারে। বস্তুত অভিনয় শিল্পীদের জন্যেই আমরা ওইসব অত্যন্ত স্লথ গল্পের টান খানিক অনুভব করি। গল্পের চাকায় তেল পড়ে না, ঝরঝরে গাড়ি টানে শিক্ষিত শিল্পীরা, টানে ভালোবাসায় নয়, নিয়মিত অর্থের প্রয়োজনে। আশ্চর্য লাগে যখন কোনও বিদূষী অভিনেত্রী এইসব সিরিয়াল সমর্থন করে বিবৃতি দেন! কারণ তিনি জানেন উল্টো কথা বললে পেশার ক্ষতি হবে। ভেবে ভয় লাগে যে, শুধু অর্থ উপার্জনের জন্যে বিকৃত রুচির ক্রীতদাসত্ব করে যেতে হবে শিক্ষিত শিল্পীদের? বাংলা নাটকে টাকা নেই, সিনেমা আশানুরূপ লাভ দেয় না, সুস্থ বিনোদন-শিল্পে খরা চলছে। তাই সিরিয়াল-নির্মাতাদের পোয়াবারো। সিরিয়ালের ভালো-খারাপ নিয়ে বিতর্কে সিরিয়ালে যুক্ত কুশলী সব দায় দর্শকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দায়-মুক্ত করেছেন এমন ঘটনা বার বার দেখেছি-পড়েছি। বিদেশি মেগা সিরিয়ালেও অনেক স্থূলত্ব থাকে, ঘটনার গতি শ্লথ হয় এবং সংলাপের বাহুল্য ছবির গুরুত্ব হ্রাস করে দেয় কিন্তু কুসংস্কার আর আচারবিচারের এমন প্রবল উৎপাত থাকে না।
আরও একটা কথা প্রায়ই শোনা যায় যে সমাজে যা ঘটছে তাই নাকি গণমাধ্যমগুলোয় প্রতিফলিত হচ্ছে। কেবলমাত্র খারাপ ঘটনাগুলি তুলে এনে রঙ চড়িয়ে পরিবেশন করাই কি গণমাধ্যমের আশু কর্তব্য? সমাজে তো দীপা কর্মকারের জীবন-কাহিনি আছে, ছন্দা গায়েনের স্বপ্পপুরণ এবং অভিযাত্রায় অসমসাহসিকতার কথা আছে, নারীর জীবনের নানা পর্বে অসামান্য সংগ্রামের আখ্যান আছে, ঝুলন গোস্বামীর ইতিহাসের পাতায় উড়ান দেওয়া আছে, আর বাংলা সাহিত্যের অফুরান ভান্ডারের কথা আর নতুন করে কি মনে করাব! আসলে এখনকার সিরিয়ালের প্রযোজকরা নারীর গল্প দেখানোর নামে ছল করে কেচ্ছা, হিংসা, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মাপকাঠিতে মোড়া ফর্মুলামাফিক একটা আধার তৈরি করেন তাতে টুকলি করা গল্প থাকে, আধুনিক সিনেমার হিট গান থাকে, নানা হিট সিনেমার গল্পের আদল থাকে, জীবনের প্রচুর সমস্যা (নারী ঘটিত, অবৈধ সম্পর্ক, চোরা চালান, মাফিয়া, দুষ্টের দমন,) থাকে কিন্তু মূল সমস্যা যথা জীবিকার সমস্যা, মুক্তির কথা কিংবা সূক্ষ্ম রসবোধ কিছুই থাকে না । দর্শকদের চাহিদা মাফিক চরিত্রের গুরুত্ব বেড়ে যায় বা চরিত্র বাদ পড়ে, দর্শকরা যে মরশুমে যে উৎসব পালন করেন সিরিয়ালের পরিবারগুলোও তাই করে—পুরোটাই হাতে গরম।
খুব অপ্রাসঙ্গিক হবে না মনে করে রবীন্দ্রনাথের কথা সাহস করে বলি- সাহিত্য, শিল্প কখনওই সংবাদপত্রের মতো ঘটনাবলী বিবৃত করে না, শিল্পীকে মন দিয়ে দেখতে হয় শুধু চোখের দেখাতে যে বাস্তব প্রত্যক্ষগোচর হয় তাকে রসোত্তীর্ণ করার জন্য শিল্পীকে মননশীল হতে হয়। অবশ্য শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থে যারা কুনাট্য পরিবেশনে নিবেদিত প্রাণ তাদের কাছে রবীন্দ্রনাথের বাণী পরিহাসের মতই শোনাবে জানি তবু বাঙালি বলে তাঁকে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে কোনও কিছু লেখা সম্ভব হয় না।
সময়ের দাবি উপেক্ষা করে সাধারণত কোনও শিল্পকর্ম গড়ে ওঠে না। নানাবিধ ঝড় ঝাপটায় পুরনো মূল্যবোধ আজকের ক্লীর্ণ ক্লিষ্ট সময়ে আর ধরে রাখা যাচ্ছে না। সমাজ ভাঙছে, পরিবার ভাঙছে, গড়ে উঠছে নতুন ভাবনা চিন্তা। কিন্তু এই টালমাটাল উত্থান পতনের মধ্যে দর্শক হিসেবে আমরা নারীর কল্যাণময়ী মূর্তির অপেক্ষায় কাল গুণি। হয়তো তা মানব মনের অবচেতন থেকে উৎসারিত মঙ্গলের এক অবিনশ্বর আকাঙ্খা। সিরিয়ালে নারীদের অবমূল্যায়ন মনের মধ্যে এক বিষাদ তৈরি করে। পারিপার্শ্বিকতার প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে সংগ্রাম করতে করতে আমরা ক্লান্ত, রিক্ত হয়ে পড়ি আর তখনই মনে হয় কোনও মঙ্গলময় বার্তা হৃদয়ের তাপ নির্বাবিত করুক। কিন্তু হায় টেলি-সিরিয়াল!
Comments are closed.