২০১০ সালের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনার স্মৃতি ফিরে এল শুক্রবার (৭ আগস্ট) রাতে কোঝিকোড়ের কারুপুর বিমানবন্দরে।

শুক্রবার রাত পৌনে ৮টা নাগাদ এরা ইন্ডিয়ার একটি এক্সপ্রেস বিমান (IX 1344) কারুপুর বিমানবন্দরে অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে পিছলে গিয়ে ৩৫ ফুট গভীর খাদে পড়ে যায়। বিমানটি দু’টুকরো হয়ে যায়। বিমানটি দুবাই থেকে আসছিল।

এই দুর্ঘটনায় দু’জন বিমান চালক-সহ ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৭০ জন বিমানযাত্রীকে উদ্ধার করা গিয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের কালিকুটের এমআইএমএস এবং বেবি মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

বিমানটিতে ২ জন বিমান চালক, ৫ জন বিমান কর্মী, ১৭৮ জন যাত্রী-সহ (১০ জন মহিলা, ২ জন শিশু) মোট ১৯১ জন ছিলেন। নিহত পাইলটদের নাম উইং কমান্ডার ক্যাপ্টেন দীপক বসন্ত সাঠে এবং ক্যাপ্টেন অখিলেশ।

করোনা পরিস্থিতিতে বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য ‘বন্দে ভারত’ মিশন চলছে। এই মিশনেই কাজ করছিল দুর্ঘটনাগ্রস্থ বিমানটি। দুবাইয়ে আটকে পড়া ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে আনছিল এয়ার ইন্ডিয়ার এই বিমানটি।

শুক্রবার কেরলের আবহাওয়া প্রতিকূল ছিল। প্রবল বৃষ্টিতে গোটা রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। একাধিক জায়গায় ধস নামার খবর পাওয়া গিয়েছে। আবহাওয়া দফতরের তরফে দক্ষিণের এই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় লাল, কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনাগ্রস্থ বিমানটি কোঝিকোড়ের কারুপুর বিমানবন্দরে অবতরণের চেষ্টা করে। অবতরণের সময় প্রবল বৃষ্টিপাত চলছিল এবং চলছিল ঝোড়ো হাওয়া। এই পরিস্থিতিতে বিমান চালক জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমবার ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয়বার অবতরণ করতে গেলেই (রাত ৭টা ৪১ মিনিটে) এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে সংবাদ সূত্রে জানা গিয়েছে। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, অবতরণের সময় বিমানের যে গতি থাকা উচিত তার থেকে বেশি গতি নিয়ে বিমানটি অবতরণ করেছিল।

বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ট্যুইট করেন এবং কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়নের সঙ্গে কথা বলেন। ট্যুইটারে তিনি লেখেন- ‘‘কোঝিকোড়ে বিমান দুর্ঘটনায় অত্যন্ত আহত বোধ করছি। যাঁরা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তাঁদের সমবেদনা জানাই। প্রার্থনা করি, আহতরা শীঘ্র সুস্থ হয়ে উঠুন। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে কথা হয়েছে। সবরকমভাবে সহযোগিতা করতে আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন।’’

মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার বিষয়টি ট্যুইটারে লিখে জানিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ট্যুইটারে লিখেছেন, ‘‘কেরলের কোঝিকো়ড়ে এই দুঃখজনক দুর্ঘটনার কথা জানতে পেরে আমি মর্মাহত। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে (এনডিআরএফ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করার নির্দেশ দিয়েছি। ’’

সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্ঘটনার তদন্তে দু’টি দল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় বিমান পরিবহন মন্ত্রক। এয়ার ইন্ডিয়া, এএআই এবং এএআইবি’র বিশেষজ্ঞরা এই দলে আছেন। দুটি দল শুক্রবার রাতেই ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে।

কোঝিকোড়ে বিমান দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতেই নয়াদিল্লির রাজীব গান্ধী ভবনে জরুরি বৈঠকে বসে অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রক। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডিজিলিএ-র ডিরেক্টর জেনারেল। এছাড়াও ছিলেন এয়ারপোর্ট অথরিটি এবং এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের শীর্ষ কর্তারা।

শুক্রবারের কোঝিকোড়ের এই বিমান দুর্ঘটনার সঙ্গে কর্নাটকের ম্যাঙ্গালোর বিমান দুর্ঘটনার অনেক মিল রয়েছে। ২০১০ সালের দুর্ঘটনাগ্রস্থ বিমানটিও ছিল এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের। সেটিও দুবাই থেকে আসছিল। ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের মতো কোঝিকোড়ের কারুপুর বিমানবন্দরও ‘টেবিল টপ’ বিমানবন্দর। ফলে শুক্রবার রাতে অনেকেরই স্মৃতিতে ফের ফিরে এসেছে ম্যাঙ্গালোরের বিমান দুর্ঘটনা, যে বিমান দুর্ঘটনায় ১৫৮ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।