দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্কের মিষ্টতা বাড়াতে পদ্মাপাড় থেকে হাড়িভাঙা আম এসেছিল গঙ্গাপাড়ে। প্রেরক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রাপকরা হলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো আম পেয়ে রীতিমতো উচ্ছ্বসিত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) তিনি একটি সৌজন্যমূলক চিঠি পাঠান শেখ হাসিনাকে। চিঠিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘শ্রদ্ধেয় হাসিনা দি’ বলে সম্বোধন করে লিখেছেন, ‘‘আপনার পাঠানো আম পেয়ে আমার খুব ভাল লেগেছে। বাংলাদেশের রংপুর জেলার হাড়িভাঙ্গা আমের নাম আমি শুনেছিলাম, আগে কখনও খাইনি। আপনি এত আম পাঠিয়েছেন যে, আমি দু’-হাত ভরে বিলিয়েছি।
ঐ আমের মধ্যে আপনার যে স্নেহ এবং বাংলাদেশের যে সৌরভ মিশে আছে তাকে আমি সম্মান জানাই। আমি সত্যিই আপ্লুত।’’

এমনিতে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে বরাবর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে এসেছে পদ্মার ইলিশ। বিগত বছরগুলিতে শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইলিশ মাছ উপহার হিসেবে পাঠিয়ে আসছেন। বেশ কয়েকবছর পর এবার উপহার হিসেবে আম পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।
কূটনৈতিক মহল বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। পাশাপাশি অনেকেই প্রশ্ন রাখছেন আম কূটনীতি কি এবার তিস্তা চুক্তির জট খুলতে পারবে? বাংলাদেশের কেউ ভারতের সঙ্গে কোনও গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক আলোচনায় অংশ নিতে এলে ইলিশ উপহার হিসেবে নিয়ে আসেন তেমনি বিভিন্ন দাবি আদায়ের ক্ষেত্রেও সুক্ষ্ম চালে ইলিশকে ব্যবহার করে থাকে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা সেবার ভারত সফরে এসে ‘মজার ছলে’ বলেছিলেন আপনারা আমাদের তিস্তার জল দিন আমরা ইলিশ দেব। তিস্তা চুক্তি নিয়ে পদ্মা, গঙ্গা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে, কিন্তু জট এখনও কাটেনি। বাংলাদেশের কাছে তিস্তার জল কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা শেখ হাসিনা বারংবার ভারতকে বুঝিয়েছিলেন। বাংলাদেশের গত নির্বাচনের আগে হাসিনা মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছেন তিস্তা চুক্তিটি সম্পন্ন করার জন্য। ভারত সরকার সবুজ সঙ্কেত দিলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মূলত তাঁর বাধাদানেই দু’দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন হয়নি। গত নির্বাচনে তার জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে হাসিনাকে অনেক জবাবদিহি করতে হয়েছিল।
এখন দেখার বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের আগে তিস্তা চুক্তির জট কাটে কিনা। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে চর্চাকারী অনেক বিশেষজ্ঞই মজা করে বলছেন, আগামী দিনে যদি দু’দেশের মধ্যে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন হয় তাহলে বলতে হবে কূটনীতিতে ইলিশের তুলনায় আম বেশি কার্যকরী!