সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় কলকাতার আইসিসিআর-এর গ্রন্থাগারে মনোরম পরিসরে “কলকাতা, আর ইউ লিসেনিং?” নামে কলকাতাকে নিয়ে অনবদ্য এক কাব্যিক সন্ধ্যার আয়োজন করেছিল নবগঠিত “ইন্টারকালচারাল পোয়েট্রি অ্যান্ড পারফরমেন্স লাইব্রেরী” সংক্ষেপে “আইপিপিএল” নামক সংগঠনটি। বাংলা ও ইংরেজি, দ্বিভাষিক এই কাব্য সন্ধ্যায় বাংলা কবিতা ও ইংরেজি কবিতা নিয়ে যথাক্রমে অংশগ্রহণ করলেন “কৃত্তিবাস” পুরস্কারপ্রাপ্ত তরুণ কবি ও আবৃত্তিকার তন্ময় চক্রবর্তী ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কবি শর্মিলা রায়। কলকাতাকে নিয়ে নানা বিষয়ের কবিতা উপস্থাপনার ফাঁকে ফাঁকে ছিল কলকাতাকে নিয়েই উভয় কবির মধ্যে আড্ডার মেজাজে কথোপকথন যার মধ্য দিয়ে উঠে আসে কলকাতার পুরনো দিনের কথা, সেই সঙ্গে হাল আমলের কলকাতার কর্মকাণ্ডও। ফলে দর্শক শ্রোতাদের কাছে ধরা পড়ে কলকাতার ক্রমপরিবর্তন।
কলকাতাকে নিয়ে এই কথকতার মধ্য দিয়েই আমাদের জানা হয়ে যায় হাওড়া জেলাতে ও বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলাতেও কলকাতা নামে গ্রাম আছে। খুব সম্ভবতঃ রায়গঞ্জ বা নদীয়ার দিকেও একটি গ্রামের নাম কলকাতা। কবিতায় কলকাতাকে নিয়ে বলতে গিয়ে উদ্ধৃত হয়েছেন কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ও পরবর্তী আধুনিক যুগের কবিদের কবিতাও। এই কথকতা থেকেই আমরা জেনে যাই “কলকাতা” শব্দের অর্থ নিয়ে দুই অবিসম্বাদিত ভাষাবিদ সুনীতি চট্টোপাধ্যায় ও সুকুমার সেনের মতপার্থক্যের কথা। মন ছুঁয়ে যায় শর্মিলা রায়ের “কফি শপ” ও “গঙ্গা”কে নিয়ে কবিতা দুটি। তিনি এই সময়ের তিন ভারতীয় কবি, যাঁরা ইংরেজিতে কবিতা লেখেন, জয়দীপ সারঙ্গী, সুতপা চৌধুরী ও সংযুক্তা দাশগুপ্তর কলকতা বিষয়ক তিনটি কবিতা পাঠ করে শোনান। এছাড়া কলকাতা যাদের প্রিয় ছিল এমন দুই কবি প্রীতিশ নন্দী ও এ্যালেন গিন্সবর্গের কথাও উল্লেখ করেন তাঁর আলোচনায়।
এসবের মাঝেই কলকাতাকে নিয়ে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র দেখান হল যেখানে পুরনো দিনের কলকাতার বিভিন্ন স্থান ও বিভিন্ন ঘটনার ছবি দেখে আমরা স্মৃতিমেদুর হয়ে উঠি। ছিল কলকাতার দুর্গাপূজার ক্রমবিবর্তনের কথা, ছিল যুদ্ধ ও নানা আন্দোলনে কলকাতার প্রতিবাদী ভূমিকার কথা, খেলা পাগল কলকাতার কথা ইত্যাদি। আর এতসব কিছু ছিল মাত্র এক ঘন্টা দশ মিনিটের স্বল্প সময়ের অনুষ্ঠানে সংযমের মধ্যে, আড্ডা ও কাব্যের আন্তরিক মেজাজে। শ্রোতা ও দর্শকের মনোযোগের নিবিড়তায় কখনও ছেদ ঘটেনি। অনুষ্ঠানের শুরুতে আই সি সি আর “এর মহা-সঞ্চালক শ্রীগৌতম দে এবং মুখ্য অতিথিরূপে ন্যপিয়ের ইউনিভার্সিটি এডিনবর্গের ইংরেজি ও সৃজনশীল সাহিত্যের অধ্যাপিকা ও কবি বাসবী ফ্রসার বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ড. জয়দীপ সারঙ্গী। সবশেষে আই পি পি এলের পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানান ড: তানিয়া চক্রবর্তী।
Comments are closed.